ইংরেজ বাজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে আইঢাই করা গরম। মঙ্গলবার মালদহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ ডিগ্রি বেশি। বিকেলে পারদ খানিক নিম্নমুখী হলেও অস্বস্তি কমেনি। তবে তার মধ্যেই ঝাড়া এক ঘণ্টা হেঁটে হেঁটে জনসংযোগ করলেন তৃণমূলনেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইংরেজবাজারের সুকান্ত মোড় থেকে রবীন্দ্র অ্যাভিনিউ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটলেন মমতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস অফিসার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শাহনওয়াজ় আলি রাইহান। বুধবারও মমতা মালদহে প্রচার করবেন।
তার আগে হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাট ময়দানে প্রসূনের সমর্থনে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন সাত দফা ভোটের জন্য। মমতা বলেন, ‘‘আমি এক মাস ধরে বাড়ির বাইরে আছি। নির্বাচন চলছে তো চলছেই! এখনও এক মাস আমাকে নির্বাচন টানতে হবে।’’ সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি প্রচণ্ড গরমে আপনাদের অসুবিধা হচ্ছে।’’
আবার লোকসভা ভোটে মালদহের দুই কেন্দ্র নিয়ে মমতা খেদের সুরে বলেন, ‘‘এই দু’টি লোকসভা আসন আমরা কোনও দিনও পাইনি। এ বারও কি পাল্টানো যায় না? কী ভাবে লড়ছি আপনারা জানেন তো? সিপিএমের অত্যাচার দেখেছেন। বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেসের জোট হয়েছে। আমরা একা লড়ছি বিজেপির বিরুদ্ধে।’’ মমতা এ-ও বলেন, ‘‘মালদহ জেলা আমাদের বিধানসভা নির্বাচনে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিল, আম ও আমসত্ত্ব দুটোই দিয়েছিল। তাই আমাদের সরকার তৈরিতে অনেক সাহায্য হয়েছিল। তার জন্য আপনাদের অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কিন্তু যবে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়েছে, আজ পর্যন্ত মালদা জেলার এই যে দুটো লোকসভা আসন আছে, এই দুটো লোকসভা আসন আমরা কোনও দিনই পাইনি।’’
বস্তুত, ২০০৯ সালে তৈরি হয় মালদা দক্ষিণ ও মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্র। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলেই রয়েছে। আর মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্র ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের দখল থাকলেও ২০১৯ সালে সেখানে জয় পায় বিজেপি। মালদহ বিমানবন্দর নিয়েও মমতা বলেন, ‘‘আমরা রেডি করে দিয়েছি। আমরা বার বার বলছি, ‘বিমান দাও।’ আমরা চাই মালদহে বিমান চালু হোক, কোচবিহারে চালু হয়ে গিয়েছে। বালুরঘাটেও হয়ে যাবে, মালদহ এয়ারপোর্ট ‘রেডি’ হয়ে গিয়েছে। যা আছে সেটাই এখন চালু করে দাও। কিন্তু কিছুতেই করছে না। ভাবছে আবার জিতবে, পাঁচ বছর বাদে আসবে, আবার মিথ্যা কথা বলবে।’’ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করে মমতা মোদী সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। আমরা কথা দিয়েছিলাম। ৬৯ লক্ষ পরিবারকে সেই টাকা আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। ১০০ দিনের কাজে বাংলা প্রথম। সংখ্যালঘু স্কলারশিপে বাংলা প্রথম। এই সব দেখে লুচির মতো ফুলছে বিজেপি।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও মালদহের সভা থেকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘অমিত শাহ মেমারিতে বলেছেন যে বাংলা ২.২৯ লক্ষ কোটি টাকার ‘ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট’ দেয়নি এবং এই কারণে তারা আমাদের টাকা দিচ্ছে না। আমি অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করছি, আমাদের সরকারের কাছ থেকে একটিও ‘ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট’ মুলতুবি নেই। আমি সিপিএমের দায় নেব না, যারা ইতিমধ্যেই বিজেপির বন্ধু।’’