রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। — ফাইল চিত্র।
উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল প্রার্থীর শপথগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের মাঝেই চোপড়া যাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে বিমানে তাঁর বাগডোগরা যাওয়ার কথা। সেখান থেকেই চোপড়া যাবেন তিনি। কথা বলবেন নির্যাতিত যুগলের সঙ্গে। রাজভবন সূত্রে এমনটাই জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্যে পর পর গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে সোমবার দিল্লিতে বসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল। জানিয়েছেন, এর থেকে ‘জঙ্গল’ও ভাল। চোপড়ার ঘটনার পাশাপাশি কলকাতার বৌবাজারে গণপিটুনি, মেডিক্যাল কলেজে পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি।
বরাহনগরের নতুন নির্বাচিত বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভগবানগোলার বিধায়ক রায়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে রাজ্যপালের। যে কারণে ওই দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তৃণমূল বিধায়কেরা অনড় যে, তাঁরা বিধানসভাতেই শপথগ্রহণ করবেন।
গত বুধবার রাজভবনে তাঁদের শপথ গ্রহণের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজভবন না গিয়ে শপথগ্রহণের দাবিতে ধর্না শুরু করেন সায়ন্তিকারা। ওই আবহে গত বুধবার দিল্লি পাড়ি দেন রাজ্যপাল। সেই থেকে রাজধানীতেই রয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই চোপড়াকাণ্ড এবং রাজ্যে গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে সরব হলেন তিনি। রাজভবন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকে বিমানে সরাসরি বাগডোগরা আসবেন। সেখান থেকেই সড়কপথে যাবেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়। সেখানে নির্যাতিত যুগলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই বাগডোগরা থেকে বিমানে দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে রাজ্যপালের। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারও যে শপথগ্রহণের জট খুলবে না, তা সোমবার সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সোমবারও সায়ন্তিকারা বিধানসভায় অম্বেডকর মূর্তির নীচে ধর্না দিয়েছেন। মঙ্গলবারও জারি থাকতে পারে তাঁদের ধর্না। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন রাজ্যপালকে বিধানসভায় এসে শপথ পাঠ করানোর কথা। তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে নিজে গিয়ে বিধানসভার ফটক থেকে রাজ্যপালকে ভিতরে নিয়ে আসবেন।
অন্য দিকে, রাজ্যপালকে দেওয়া তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দেওয়া ‘সময়সীমা’ও সোমবার পার হয়ে গিয়েছে। কুণাল ‘চাপ’ তৈরি করে জানিয়েছিলেন, সোমবারও সায়ন্তিকারা শপথ নিতে না পারলে মঙ্গলবার থেকে ‘দিল্লির তাজ প্যালেসের ঘটনা’ প্রকাশ্যে আসতে থাকবে। তাই মঙ্গলবার যখন রাজ্যপাল চোপড়া সফরে থাকবেন, তখন তৃণমূল নেতা কুণাল তাঁর বিরুদ্ধে কী বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে আনেন, সে দিকেও নজর থাকবে।
দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের কাছে রাজ্যে আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি চোপড়াকাণ্ড নিয়েও সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে হিংসার ধারা অব্যাহত। বাংলার রাস্তায় রক্তের বন্যা। গুরুদেবের নিজের ভূমিতে এ রকম হচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক।’’ এর পর তিনি পুলিশ এবং পুলিশমন্ত্রীকেও তোপ দেগেছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাম করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এত মানুষের সামনে এক জন মহিলাকে মারধর করা হল। কেউ প্রতিবাদ করলেন না! সেখানে কি পুলিশ রয়েছে? লোকজন জিজ্ঞেস করছেন, কে পুলিশ আর কে চোর? পুলিশবাহিনীর কিছু অংশের মধ্যে অপরাধ চলছে। কিছু আইপিএস অফিসার রাজনৈতিক প্রভুর হয়ে কাজ করছেন। পুলিশমন্ত্রী তাঁর কাজ করছেন না।’’ বাংলায় ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে বলেও দাবি করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গল এর থেকে ভাল। কারণ, জঙ্গলে কাউকে রোমাঞ্চের জন্য মারা হয় না। এখানে তাই হচ্ছে। এটা চলবে না। এটা বন্ধ করতে হবে।’’ তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন।
চোপড়ায় তৃণমূল নেতা তাজিমুল হক ওরফে ‘জেসিবি’র বিরুদ্ধে এক তরুণ-তরুণীকে নিগ্রহের ভিডিয়ো ঘিরে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। ওই ভিডিয়োটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। গোটা ঘটনা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, অভিযুক্ত তাজিমুল তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ’। এই নিয়ে বিরোধীর মতোই এ বার সরব রাজ্যপালও। দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ নিয়ে জটের মাঝেই তিনি মঙ্গলবার যাচ্ছেন চোপড়ায়। সোমবার আবারও দুই বিধায়ক শপথগ্রহণের দাবিতে জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনও সদুত্তর না পেয়ে মঙ্গলবার আবারও বিধানসভায় ধর্না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সায়ন্তিকা।