(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
তৃণমূলের দুই জয়ী প্রার্থী তথা হবু বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকারের শপথ নিয়ে ‘জটিলতা’র মধ্যেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপর অন্য ‘চাপ’ তৈরি শুরু করে দিল তৃণমূল। বরাহনগর এবং ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে জেতার পর ২৫ দিন কেটে গেলেও শপথ নিতে পারেননি সায়ন্তিকা এবং রায়াত। পরিষদীয় স্তরে তা নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, তখন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে সোমবার বেলা ৩টে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেন তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ।
শুক্রবার কুণাল বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালকে আমি সম্মান করি। কিন্তু আমি তৃণমূলের এক জন সৈনিক। যদি সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে আমাদের দু’জন জয়ী প্রার্থী বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে না পারেন, তা হলে মঙ্গলবার থেকে দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে কী ঘটেছিল, সেই অজানা ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করবে।’’
কী হয়েছিল দিল্লির তাজ প্যালেসে, তা অবশ্য খোলসা করেননি কুণাল। তবে রাজ্যপালকে জড়িয়ে দিল্লির একটি হোটেলের কথা তৃণমূলের তরফেই বলা হয়েছিল মাস দুয়েক আগে। যে সময়ে রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ্লীলতাহানি এবং যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন, সেই একই সময়ে দিল্লির ওই হোটেলে ঘটে-যাওয়া পুরনো একটি ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছিল শাসকদলের তরফে। অনেকের বক্তব্য, কুণাল সেটার কথাই বলতে চেয়েছেন। এবং এই বক্তব্য প্রকাশ্যে জানিয়ে পরোক্ষে রাজ্যপালের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চেয়েছেন। পাশাপাশিই কুণাল রাজ্যপালকে রাজনৈতিক আক্রমণও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল শপথগ্রহণে বিঘ্ন ঘটাতে চাইছেন। উনি বিজেপির লোকের মতো আচরণ করছেন।’’
সায়ন্তিকাদের শপথ নিয়ে রাজভবন-বিধানসভার সংঘাত তৈরি হয়েছে। সেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে নবান্নও। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরিই বলেছেন, সায়ন্তিকারা রাজভবনে যাবেন না। কারণ, মমতার কথায়, ‘‘রাজভবনে যা কীর্তিকলাপ হয়, তাতে ওখানে মেয়েরা যেতে ভয় পায়।’’ আবার রাজ্যপালের বক্তব্য, সায়ন্তিকা-রায়াতকে রাজভবনে গিয়েই শপথ নিতে হবে। সায়ন্তিকারা বলছেন, তাঁরা রাজভবনে যাবেন না। রাজ্যপাল বিধানসভায় আসুন অথবা স্পিকারকে শপথগ্রহণ করানোর দায়িত্ব দিন। সেই দাবিতে বিধানসভা চত্বরে বুধবার থেকে ধর্না শুরু করেছেন সায়ন্তিকা এবং রায়াত। শুক্রবারও তাঁরা ধর্না চালিয়েছেন বিধানসভায় বিআর অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে। মমতার নির্দেশে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের মন্ত্রী এবং বিধায়কেরাও। রাজ্যপাল অবশ্য বুধবার বিকেলের বিমানেই দিল্লি চলে গিয়েছেন।
এর মধ্যে পরিষদীয় স্তরে ‘দৌত্য’ শুরু করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে চিঠি লিখেছেন বিমান। তাতে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ‘একবগ্গা’ মনোভাবের জন্য নির্বাচনে জিতেও দুই জয়ী প্রার্থী বিধায়ক হিসাবে নিজেদের কাজ শুরু করতে পারছেন না। ওই চিঠি পাঠানোর পাশাপাশিই বিমান জানিয়েছিলেন, তিনি উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের সঙ্গেও আলোচনা করতে চান। কারণ, ধনখড় একসময়ে বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন। তার পর শুক্রবার দু’জনের কথা হয়। তার পরেও সায়ন্তিকাদের শপথ জট কাটার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। সেই পর্বেই এ হেন মন্তব্য করে রাজ্যপালের উপর বাড়তি ‘চাপ’ তৈরির পথে হাঁটলেন কুণাল। এখন দেখার, রাজ্যপাল সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে শপথের ‘জটিলতা’ কাটানোর বিষয়ে তৃণমূলের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ কোনও পদক্ষেপ করেন কি না।