Athlete

Athlete-worker: খোঁজ নেয়নি কেউ, জাতীয় স্তরে রেকর্ড করা দিনাজপুরের সোনার ছেলে এখন পরিযায়ী শ্রমিক

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের অশোকগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের বছর ছাব্বিশের ওই যুবক ছোট থেকেই খেলাধুলোয় পারদর্শী ছিলেন।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share:

অসহায়: নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে রিঙ্কু। নিজস্ব চিত্র

মরচে ধরা ট্রাঙ্ক খুলতেই বেরিয়ে এল একগুচ্ছ জং-ধরা মেডেল আর স্যাঁতসেঁতে একগাদা শংসাপত্র। সবই জাতীয় স্তরের। মেডেলগুলির মধ্যে চারটি সোনার। সেগুলো জড়ো করে ধরে আক্ষেপ রিঙ্কু বর্মণের, ‘‘সোনার মূল্য কে দেবে!’’

Advertisement

হরিয়ানায় ২০০৯ সালে ন্যাশনাল ইন্টার জ়োনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ১ হাজার মিটার রিলে রেস ২ মিনিট ১.৪৯ সেকেন্ডে শেষ করে নতুন মিট রেকর্ড গড়েছিলেন রাজবংশী সম্প্রদায়ের অ্যাথলিট রিঙ্কু। তার আগে পরেও জাতীয় সাফল্য রয়েছে আরও। কিন্তু সেই সোনার ছেলেই এখন আর্থিক অনটনে পরিযায়ী শ্রমিক হয়েছেন। পাশে দাঁড়াননি কেউ। খোঁজও নেননি। সাড়ে তিনশো টাকা দৈনিক রোজগারে সুদূর গুজরাতের সুরাতে এম্ব্রয়ডারির কাজ করেন তিনি। খেলাধুলো ছাড়তে হয়েছে বেশ কয়েক বছর হল।

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের অশোকগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের বছর ছাব্বিশের ওই যুবক ছোট থেকেই খেলাধুলোয় পারদর্শী ছিলেন। শিলিগুড়িতে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সাই) শিবিরে সুযোগও পান। সেখানে থেকেই রেলওয়ে স্কুলে পড়াশোনা আর খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছন্দ কাটে কয়েক বছর আগে বাবা গণেশ বর্মণ মারা গেলে। খেলার জীবন ফেলে রিঙ্কুকে চলে আসতে হয় বাড়িতে, সংসারের হাল ধরতে। রিঙ্কুর কথায়, ‘‘কয়েকটি জায়গায় আবেদন করেছিলাম। চাকরি পাইনি। গাঁয়ের লোকজন যখন বলে, খেলে তোর কোনও লাভ হল না রিঙ্কু, হতাশায় বুক ফেটে যায়। একটা ছোট চাকরি তো অন্তত পেতে পারতাম।’’ গ্রামে এক প্রান্তে রিঙ্কুদের ক্ষয়াটে মাটির দেওয়াল আর টিনের চাল ভেদ করে শেকড় ছড়াচ্ছে হতাশা।

Advertisement

রিঙ্কুর মা আরতি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পরে যেটুকু জমি সম্বল ছিল বিক্রি করে দিতে হয়। দুই মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবার। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আমি লোকের জমিতে দিনমজুরি করি। রাতে ঘুমোতে গেলে ছেলেটার জন্য ছটফট করি।’’ মায়ের দু’চোখ বেয়ে জল নামে।

কেন রিঙ্কুদের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিছু করছে না? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমিতাভ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা দুঃস্থ খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াই। তাঁদের চর্চা বজায় রাখার জন্য আমরা সাহায্যের হাত বাড়াই। খোঁজ নিচ্ছি।’’ প্রায় একই কথা বলেছেন জেলাশাসক আয়েশা রানি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রিঙ্কুর খোঁজ নিয়ে তাঁকে সাহায্যের চেষ্টা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement