সপরিবার ফিরহাদ হাকিম। ফাইল ছবি।
ববি হাকিম কি পেশাদার রাজনীতিবিদ? রাজনীতি করেই কি সংসার চলে ফিরহাদের? হাকিম পরিবারের বিন্যাসই বা কী? নিজের পেশা থেকে সংসার, শিক্ষা থেকে মা, শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানাকথা’য় এসে ‘ঘরের কথা’ নিয়ে খোলামেলা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম (ববি)। জানালেন, ছোট থেকে রাজনীতিই শুধু নয়, ব্যবসাও করেন তিনি। পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে সরকার থেকে ঋণ নিয়ে যে ব্যবসার শুরু, তা আজও চলছে। পাশাপাশি অকপটে জানালেন, তাঁর জীবনে মায়ের ভূমিকার কথা।
লাইভ অনুষ্ঠানে এক দর্শকের ববির উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘পারিবারিক পরিসরে অত্যন্ত সম্প্রীতির পরিবেশে আপনি বড় হয়েছেন। আপনার মায়ের কথা বলবেন?’ ববি বলেন, ‘‘আমার মা স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। সারা জীবন স্কুলে পড়িয়েছেন। মা অঙ্ক কষতে খুব ভালবাসতেন। রাত জেগে জেগে অঙ্ক করতে দেখেছি মা-কে। কিন্তু পরে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আমাদের মানুষ করার জন্য সংসারে মন দেন। আমার বিয়ের পর দেখেছি, নতুন বৌমার উপর সব কাজ চাপিয়ে দিয়ে নিজে অঙ্ক কষছেন মন দিয়ে। হাসতে হাসতে ববির স্বগতোক্তি, ‘‘এমন শাশুড়ি এবং মা কখনও দেখিনি আমি!’’ ফিরহাদ জানান, আদতে আদ্যন্ত বাঙালি তাঁর মা ইলাহাবাদে হিন্দিতে পড়াশোনা করেছেন। পিছিয়ে পড়া মেয়েদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন। চাকরি করতেন গার্ডেনরিচের মৌলানা আজাদ মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে। শিক্ষকতা করতে করতেই উর্দুও শিখে নিয়েছিলেন। শুধু শেখাতেই থেমে থাকা নয়, এক সময় কলকাতার মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞানের উর্দু ভাষায় লেখা খাতা তাঁর মা-ই দেখতেন বলে জানালেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী।
মুখোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে ছিলেন ববির মা। ববির দাদুর নাম সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। আর তাঁর বাবার পরিবার হাকিম। ববির আক্ষেপ, ‘‘বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তের পরেই দেখলাম এখন মুখোপাধ্যায়-হাকিম এ সব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমার মামাবাড়ি এবং আমার বাড়িতে কোনও দিন এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে দেখিনি। আমাদের কাছে এগুলি খুবই সাধারণ বিষয়।’’
কেমন ছিল ববির দাম্পত্যের শুরুর দিনগুলো? বিয়ের দিনই প্রথম বার স্ত্রী রুবিকে দেখা। শনিবার রাতে আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানাকথা’য় এমনটাই জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম (ববি)। কলকাতার বর্তমান মহানাগরিকের কথায়, ‘‘ও আমাকে না দেখেই বিয়ে করেছিল। বিয়ের আগে কোনও দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। বিয়ের দিনই ওকে প্রথম বাড়িতে দেখি। বিয়ের আগে আমার বাবা আমাকে এক বার দেখে আসতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, তুমি নিজে পছন্দ করেছো, এর পর আমার আর কিছুই বলার থাকে না।’’
ববির এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁর স্ত্রী রুবির ভূমিকা কতটা? ববি বলেন, ‘‘আমাদের বিয়ে হয়েছে ৩৭ বছর হয়ে গেল। এই গোটা সময়টা জুড়ে সব সময় আমার পাশে থেকেছে আমার স্ত্রী। আমার কঠিন সময়ের সাক্ষী ও। পুলিশের মার খেয়ে বাড়ি ফিরেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে মাথা ফেটে গিয়েছে। ও সব সামলেছে।’’ একটা সময়ে ববির মা-বাবা তাঁকে রাজনীতি ছেড়ে বেরিয়ে আসতেও বলেছিলেন। তখন রুবিই তাঁকে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন। মহানাগরিক বলেন, ‘‘বাবা-মা ওঁকে (রুবিকে) তখন বলতেন, রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসা করতে বলো। কিন্তু রুবি সব সময় আমায় বলে গিয়েছে, ‘তোমার যেটা পছন্দ, তুমি সেটাই করবে।’ ও (রুবি) বাবা, মা-কে এ-ও বলেছিল, ‘আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু রাজনীতি ছাড়বে না।’ শক্ত পিলারের মতো সারা জীবন আমার পাশে থেকেছে রুবি।’’
ফিরহাদ জানান, রাজনীতি তাঁর পেশা নয়, নেশা। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। যৌবনে পাঁচ জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে সরকার থেকে ঋণ নিয়ে ক্যানিংয়ে একটি বরফকল করেছিলেন। সেটা এখনও আছে। নিউ আলিপুরে প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর আছে একটি স্নানঘর সাজানোর সামগ্রী বিক্রির দোকান।