ফাইল ছবি।
তাঁকে ‘মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্যের সঙ্গে জুড়ে এখনও ভোটের আগে লাফিয়ে ওঠে বিজেপি। কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল? তিনি কী বলেছিলেন, আদৌ পাকিস্তানের কথা বলেছিলেন কি? অ-জানাকথায় এই সংক্রান্ত যাবতীয় ধোঁয়াশা পরিষ্কার করলেন কলকাতার বর্তমান মহানাগরিক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ ববি হাকিম।
উত্তরপ্রদেশে ভোট আসছে। আর হাই ভোল্টেজ ভোটের পিছু পিছু দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে ঢুকে পড়েছে পাকিস্তানও! বিরোধীদের অভিযোগ, 'পাকিস্তান' শব্দটি এনে মেরুকরণের চুল্লিতে হাওয়া দিয়ে ভোট বৈতরণী পেরোতে চায় বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের আগে বিহারেও এর ‘সফল’ প্রয়োগ দেখা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে বাংলাতেও কার্যত একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফিরহাদ। ঠিক কী হয়েছিল? 'অ-জানাকথায় এসে সে কথা স্পষ্ট করলেন তিনি।
ফিরহাদ বলেন, ‘‘পাকিস্তানের 'ডন' পত্রিকার একজন সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিলেন। আমি তখন গার্ডেনরিচে প্রচার করছি। অবস্থাটা এ রকম, চার ফুট গলির মধ্যে দশ হাজার মানুষ থাকেন। চারদিক থেকে গোলাপ জল দিচ্ছে, ফুল দিচ্ছে, এ সব চলছে, এ সব দেখে ওই সাংবাদিক ভদ্রমহিলা বলেছিলেন, দেখে মনে হচ্ছে আমি করাচির কোনও রাস্তায় আছি। আমি হেসে বলেছিলাম, ‘ইউ ফিল অ্যাট হোম’ (মনে হবে বাড়িতেই আছেন)। তার পর আর কোনও কথা হয়নি তাঁর সঙ্গে।’’ ববি বলেন, ‘‘এর পর ওই সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে শুনেছিলাম, তাই আর কথাও হয়নি। পরে শুনলাম পাকিস্তানের কোনও এক পত্রিকায় আমার মুখে কথা বসিয়ে বিভিন্ন জিনিস লেখা হয়েছে। আর সেই পত্রিকা এক মাত্র বিজেপির পার্টি অফিসেই আসে।’’ যে শব্দ নিয়ে বিতর্ক, তা তিনি কখনও বলেনইনি বলে দাবি ফিরহাদের। তাঁর ইঙ্গিত, বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই একে ইস্যু করে মেরুকরণের ধুয়ো তুলতে শুরু করেছিল। ফিরহাদের কথায়, ‘‘যে হেতু আমার নাম ফিরহাদ হাকিম, তাই 'পাকিস্তান' উচ্চারণ করা মানেই আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করছি। এটাকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়ার জন্য আমার মুখে এই কথাগুলো বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি তাঁদের বলি, আপনারা যতটা ভারতীয়, আমি তার চেয়েও বেশি ভারতীয়। মৃত্যুর পর আমার দেহ এই ভারতবর্ষের মাটিতেই মিলিয়ে যাবে। এ ভাবে সাম্প্রদায়িক উসকানি আমার কাছে অত্যন্ত অপমানের। কারণ আমি ভারতকে কতটা ভালবাসি, তার প্রমাণ আমি তোমাকে দিতে যাব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, দেশের জন্য আমি মৃত্যুবরণ করতে পারি। একটা ধর্মে জন্মেছি বলে বার বার করে আমাকে প্রমাণ দিতে হবে! ’’ ববির মতে, এ সবই হল বিজেপি-র ভোটে জেতার রাজনীতি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমরা মনে করি, এ সব করে সমাজকে ভাগ করে দিচ্ছে। সমাজে যে ঘৃণা ঢোকাচ্ছে, তার চেয়ে বড় সমাজবিরোধী আর কেউ নেই।’’