উত্তর কলকাতার বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রচারে বিশ্বরূপ দে। নিজস্ব চিত্র।
বাইশ গজের প্রশাসক হিসেবেই তাঁকে চেনে মানুষ। এ বার কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী সেই বিশ্বরূপ দে। ক্রিকেট প্রশাসক থেকে রাজনীতির ময়দানে আসার গল্পও অনেকটা টি-২০ ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে রংবদলের মতোই।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পরেই প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র তাঁকে রাজনীতিতে যোগদানের প্রস্তাব দেন। সঙ্গে আরও প্রস্তাব দেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার। পারিবারিক আপত্তির কারণে প্রথমে রাজি না হলেও, পরে সোমেনের কথায় রাজি হয়ে ওয়ার্ডে সামাজিক গতিবিধি শুরু করে দেন বিশ্বরূপ। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউন একযোগে শুরু হলে ওয়ার্ডে অক্সিজেন পার্লার করা থেকে শুরু করে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া, ২৪ ঘণ্টার অ্যাম্বুল্যান্স চালু করা, সবই করেছেন বলে দাবি তৃণমূল প্রার্থীর। কিন্তু ৩০ জুলাই সোমেনের প্রয়াণের পর কংগ্রেসে যোগদান থমকে যায়। কিছুটা থমকে যান বিশ্বরূপও।
রাজনীতিতে যোগদান আটকে গেলেও, পরিষেবা দিতে দিতেই করোনায় আক্রান্ত হন বিশ্বরুপ। সেই সময় তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রস্তাব দেন তৃণমূলে যোগদানের। বিজেপি-ও যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিল বিশ্বরূপকে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরকে পত্রপাঠ না করে দেন তিনি। বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘আমরা কংগ্রেস রাজনীতির ঘরানার লোক। আমাদের কলকাতার বাড়িতে গাঁধীজি এসেছিলেন। সেই পরিবারের সদস্য হয়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারিনি।’’ নয়না বৌদি ও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। ২৬ নভেম্বর নাম ঘোষণার আগেই প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত পেয়ে যান বিশ্বরূপ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একজন ক্রিকেট প্রশাসকের জীবন সর্বোচ্চ নয় বছর। তাই গুরু জগমোহন ডালমিয়ার মতোই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি) ১১ বছর শাসন করা বিশ্বরূপ এখন ক্রিকেট প্রশাসন থেকে অনেক দূরে। কিন্তু নিজের ক্রীড়াপ্রেমী মনকে ব্যস্ত রাখতে যুক্ত হয়েছেন সেন্ট্রাল ক্যালকাটা স্পোর্টিং ক্লাব ফুটবল দলের সঙ্গে। বেঙ্গল টেবিল টেনিস এ্যাসোসিয়েশন-সহ নানা ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজেকে জড়িত রেখেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে বিশ্বরূপের পিতা ভূপেন্দ্রকুমার দে-ও ছিলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। তাই তাঁর ভোটে দাঁড়ানোটাকে কোনওভাবেই কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে দেখছেন না বিশ্বরূপ। তিনি বলছেন, ‘‘বাবাকে ছোট থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি। তাঁর শিক্ষা নিয়েই যখন যেমন পেরেছি, তখন তেমন কাজ করে মানুষকে সাহায্য করেছি। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে আর্শীবাদ করলে, তাঁদের পাশে আরও বেশি করে থাকার সুযোগ পাব।’’