অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দফতরে হাজিরা দেবেন না। সে ক্ষেত্রে কী করবে ইডি? তারা কি তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে? না কি তাঁকে আবার ডেকে পাঠাবে? পাঠালেও কবে পাঠাবে? মঙ্গলবার না-গেলে তার পরে? না কি তার আগেই? তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কী ভাবছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা?
খোঁজখবর নিয়ে যা জানা যাচ্ছে, আপাতত অভিষেকের তরফে ‘আনুষ্ঠানিক’ বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছে ইডি। গত বৃহস্পতিবার অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। তিনি চার ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদ সেরে বেরোনোর মিনিট পনেরোর মধ্যেই অভিষেককে তলব করা হয়। সে কথা অভিষেক নিজেই জানিয়েছেন। তৃণমূলের শীর্ষনেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘সময়টা খেয়াল করুন। আমার স্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট পনেরো-কুড়ির মধ্যেই আমার কাছে ডাক চলে এল!’’ পাশাপাশিই অভিষেক ঘোষণা করেন, তিনি ইডির তলবে সাড়া দেবেন না। অভিষেক বলেন, ‘‘আমার সৌজন্য আমার দুর্বলতা নয়। আপনি যখন ডাকবেন, তখনই আমাকে যেতে হবে তা নয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ইডির দফতরে গিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা অপচয় করার মতো সময় আমার হাতে নেই। ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। তার পরে আপনারা যখন ডাকবেন, তখনই যাব।’’
তার পর থেকেই ইডির অন্দরে এই আলোচনা শুরু হয়েছে যে, অভিষেক হাজিরা না দিলে কী পদক্ষেপ করা হবে। তবে ইডি সূত্রের খবর, অভিষেক যে মঙ্গলবার হাজিরা দেবেন না, সে বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে তাদের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য আসেনি। ফলে অভিষেকের ইডি দফতরে যাওয়া বা না-যাওয়া নিয়ে এখনই কিছু ভাবছে না তারা। আপাতত তারা অপেক্ষা করছে, অভিষেক তলবের চিঠির জবাবে ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে তাঁর ওই বক্তব্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানান কি না তা দেখার জন্য।
রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে (যেখানে ইডির দফতর) অভিষেককে তলব করা হয়েছে। এই তদন্তে এর আগে গত ২০ মে কলকাতার নিজাম প্যালেসে (যেখানে সিবিআই দফতর) সাড়ে ৯ ঘণ্টারও বেশি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস আস্ত একটা অশ্বডিম্ব!’’ সেই পর্বের পর প্রথম বার এই তদন্তে অভিষেককে ডাকল অপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
ইডি সূত্রের খবর, আপাতত অভিষেকের আসার জন্য তারা অপেক্ষা করবে। পাশাপাশিই ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করলেও অভিষেক যে তাদের দফতরে যাবেন না, সে ব্যাপারে তারা এখনও ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে কোনও তথ্য পায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাঁদের তলব করা হয়, অনেক সময়ই নানা কারণে তাঁরা হাজিরা দিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাকে তা আগাম জানান। ইডি সূত্রের দাবি, অভিষেকের তরফে শনিবার পর্যন্ত তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তথ্য আসেনি। তবে একই সঙ্গে অনেকের ধারণা, অভিষেক নিশ্চয়ই মঙ্গলবারের আগে ইডিকে ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেবেন।
তেমন কিছু না-জানিয়ে অভিষেক মঙ্গলবার হাজিরা না-দিলে পরবর্তী কী পদক্ষেপ করা হবে? ইডি সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে ডাকা হলে তিনি যদি হাজিরা না দেন, তা হলে তাঁকে দ্বিতীয় বার তলব করার বিষয়টি থাকেই। অভিষেকের ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আবার কবে তলব করা হবে বা কত দিন পর আবার ডাকা হতে পারে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। অভিষেক জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের পর ডাকলে তিনি যাবেন। তা হলে কি পঞ্চায়েত ভোটের পরই আবার অভিষেককে ডাকতে পারে ইডি? যদিও ইডি সূত্রে খবর, তলবের দিন অনুযায়ী কেউ হাজিরা না দিলে তার কারণ জানাতে বলা হয়। সেই কারণ বিবেচনা করে দেখা হয়। তবে ওই সূত্রের আরও বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণে (পঞ্চায়েত ভোট) তদন্তপ্রক্রিয়া থমকে থাকবে না। তদন্তকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
ইডির একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিষেকের তরফে ‘আনুষ্ঠানিক’ কোনও বয়ান না-এলে তারা দিল্লির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারে পরবর্তী নির্দেশের জন্য। তবে অভিষেককে ডাকা যে হবে, তা নিয়ে বিশেষ সংশয় নেই। সেটা পঞ্চায়েত ভোটের আগে না পরে, এখন দেখার সেটাই।
উল্লেখ্য, ধর্মতলায় শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর পরেই রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে নিম্ন আদালতে চিঠিও দেন কুন্তল। পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান কলকাতার হেস্টিংস থানাতেও। তার পর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, প্রয়োজনে সিবিআই বা ইডি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। সেই একই নির্দেশ বহাল রাখেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্হাও। তার পরেই অভিষেককে ডেকেছিল সিবিআই। ‘নবজোয়ার যাত্রা’ দিন দুয়েকের জন্য অব্যাহতি নিয়ে জেরার জন্য হাজিরাও দিয়েছিলেন অভিষেক। এ বার তৃণমূলের ‘সেনাপতি’কে তলব করল ইডিও।