Bengal SSC Recruitment Case

বিক্ষোভ থামাতে বেআইনি নিয়োগ বিক্ষোভকারীদেরই কয়েক জনকে! এসএসসি মামলায় দাবি করল ইডি

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওই নিয়োগ হয়েছিল। তাঁদের নিয়োগ করার সুপারিশ এসেছিল খোদ রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে! আদালতে পেশ করা নথিতে এমনটাই দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ ০৮:৫৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে অনেক দিন ধরে। সেই আন্দোলন থামাতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে কয়েক জনকে শিক্ষক হিসাবে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওই নিয়োগ হয়েছিল। তাঁদের নিয়োগ করার সুপারিশ এসেছিল খোদ রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে! আদালতে পেশ করা নথিতে এমনটাই দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

Advertisement

এসএসসি নিয়োগ দু্র্নীতির তদন্ত করছে ইডি। তদন্তে নেমে এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হা এবং ‘মিডলম্যান’ প্রসন্নের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে দাবি ইডির। ওই তদন্তের সূত্রে শিক্ষা দফতরের আধিকারিক সমরজিৎ আচার্যের বয়ান নিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই বয়ান থেকেই জানা গিয়েছে, নবম এবং দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৮৩ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই নাম বেআইনি ভাবে সুপারিশ করা হয়েছিল বলে দাবি ইডির। ‘মিডলম্যান’ প্রদীপ সিংহ ওরফে ছোটুর থেকে এসেছিল ওই সুপারিশ। সুপারিশ এসেছিল শান্তিপ্রসাদের মাধ্যমেই। ইডির দাবি, সেই সুপারিশপত্রের ‘প্রিন্ট’ করিয়েছিলেন সমরজিৎ। তাঁর বয়ান থেকেই জানা গিয়েছে, ১৮৩ জনের মধ্যে তিন জনের চাকরির সুপারিশ এসেছিল শিক্ষা দফতর থেকে। তাঁরা এসএসসিতে বেআইনি নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বিক্ষোভ দমন করার জন্যই তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে নথিতে দাবি করেছে ইডি।

ইডির দাবি, একই ভাবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৩৯ জনের নাম বেআইনি ভাবে সুপারিশ করা হয়েছিল। ইডি নথিতে জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও সেই সুপারিশপত্রের ‘প্রিন্ট’ করান সমরজিৎ। নবম-দশমের নিয়োগের মতো এ ক্ষেত্রেও ছোটু ওরফে প্রদীপের থেকে এসেছিল সুপারিশ শান্তিপ্রসাদের মাধ্যমে। ওই ৩৯ জনের মধ্যে ৯ জনের নাম রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল। ইডির দাবি, ওই ৯ জন ছিলেন আসলে বিক্ষোভকারী। এএসসির নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের বিক্ষোভ দমন করার জন্যই চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে ইডি। তাদের আরও দাবি, সমরজিতের বয়ান থেকেই মিলেছে এই তথ্য।

Advertisement

গত এপ্রিলে ইডির হাতে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদ। নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১০ অগস্ট শান্তিপ্রসাদকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। পরে ৯ সেপ্টেম্বর আবার তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেয়। তার পর থেকে নিজ়াম প্যালেসেই ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত। তার পর থেকে তিনি জেলবন্দিই ছিলেন। এর পর ইডি তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে আদালতে। শান্তিপ্রসাদকে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিশেষ আদালতের বিচারক। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ার অভিযোগ ছিল শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে। গ্রুপ-সি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। নিয়োগ সংক্রান্ত যে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তার চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছিল শান্তিপ্রসাদকে। অভিযোগ, তাঁর আমলেই মূলত নিয়োগ দুর্নীতি হয়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই যে এফআইআর দায়ের করেছিল, তাতে প্রথম শান্তিপ্রসাদের নাম ছিল বলে সূত্রের খবর। শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী এবং সহকারী শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলাতেও বার বার তাঁর নাম উঠে এসেছে। এমনকি, তাঁর রিজেন্ট পার্কের বাড়িতে বেশ কয়েক বার তল্লাশিও চালিয়েছে ইডি এবং সিবিআইয়ের আলাদা আলাদা দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement