আমপানের জেরে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা। ছবি: পিটিআই
স্থলভাগের সঙ্গে ক্রমশই দূরত্ব কমাচ্ছে আমপান। আবহবিদরা আশঙ্কা করছেন, বুধবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যেই রাজ্যে ঢুকে পড়তে পারে ওই সুপার সাইক্লোন। আমপানের গতিপথে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপ। প্রবল বেগে সেই ঝড় আছড়ে পড়লে লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ তিন জেলা। তার তাণ্ডবে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সুন্দরবনও। ঝড়ের সঙ্গে এই তিন জেলাতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে উপকূলবর্তী এলাকাতে এক থেকে দেড় তলা বাড়ির সমান জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। ওই তিন জেলা ছাড়া, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলিতেও আমপানের জোরাল প্রভাব পড়বে। এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস, এই তিন অস্ত্র নিয়েই দুর্দান্ত গতিতে ধেয়ে আসছে আমপান। স্থলভাগে আছড়ে পড়লে কতটা ভয়াবহ রূপ ধরতে পারে সেই সুপার সাইক্লোন, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে তারই আঁচ দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমপানের তাণ্ডবে প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সুন্দরবনও।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বুধবার সকাল থেকেই প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে। ক্রমশই তীব্র থেকে তীব্রতর হবে তার গতি। আবহবিদদের মতে, ওই তিন জেলায় ঝড়ের গতিবেগ সাধারণত ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৭৫ কিমি থাকবে। তবে সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্তও হতে পারে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। তবে ঝড়ের এই গতি যে সব জেলাতেই এমন ভয়ঙ্কর থাকবে তা নয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিমি হতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১২০ কিমি।
আরও পড়ুন: পাশে আছি, মমতাকে ফোন করে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস অমিতের
ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ-সহ গঙ্গার তীরবর্তী জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। দুই ২৪ পরগনায় ৪ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় ৩ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদরা। জলোচ্ছ্বাসের জেরে নিচু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঝড়ের আগে কী কী সতর্কতা নেবেনই, ঝড়ের সময় কী করবেন, কী করবেন না
দিঘা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে আমপান। তার গতিপথ উত্তর-পূর্ব দিকে। এই গতিপথের মধ্যেই রাজ্যের কোথাও সরাসরি ধাক্কা মারতে পারে আমপান। আবার কোথাও তার লেজের ঝাপটা লাগবে। আবহাওয়া দফতর বলছে, ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস, এই তিনটি থেকেই জনজীবনে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গাছ, পুরনো বাড়ি ও হোর্ডিং নিয়ে কলকাতা-সহ অন্যান্য এলাকাগুলিকে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর। বুধবার কলকাতার দোকান-বাজার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। একই সঙ্গে মৎস্যজীবীদেরও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ মে-র আগে তাঁদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যে সব এলাকায় আমপান জোরাল প্রভাব ফেলবে সেখানে শাকসব্জি চাষে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ