উপচে গিয়েছে সিঁড়ির নীচে রাখা বাক্স। নিজস্ব চিত্র
ঝড় থেমে গিয়েছে তিন মাস আগেই। দু’দফায় ক্ষতিপূরণের আর্জি জানানোর সুযোগ পেয়েছেন আমপানে ক্ষতিগ্রস্তেরা। অনেকে ক্ষতিপূরণ পেতে আরম্ভও করেছেন। তবু এখনও আমপানের রেশ রয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক ব্লকেই। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তেরা দলে দলে এসে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন ব্লক অফিসে।
আমপানের প্রথম দফার ক্ষতিপূরণে বিস্তর গরমিল ও দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। পরিস্থিতি দেখে গত ৬ ও ৭ অগস্ট দ্বিতীয় পর্বে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র জমার সুযোগ দেয় সরকার। বর্ধিত সেই সময়সীমা বহু দিনই পেরিয়েছে। নতুন করে সময়সীমা বাড়েওনি। তবু অনেকে আশায় রয়েছেন, যদি ফের আবেদন জমা নেয় সরকার। তাই ক্ষতি হোক, না-হোক, আগেভাগে ব্লক অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র জমা করছেন। গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড-সহ জেলার অনেক ব্লকেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। রাশিকৃত আবেদনপত্র নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন ব্লক অফিসের কর্তারা। আবেদনপত্র জমছে সিঁড়ির তলায়।
গড়বেতা ১ ব্লক অফিসে যেমন বাক্স উপচে পড়ছে খামবন্দি আবেদনপত্র। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এর বেশিরভাগই আমপানের ক্ষতিপূরণের আবেদন। কিছু আছে আবাস যোজনার আবেদন। টিনের বাক্স ভর্তি হয়ে যাওয়ায়, অতিরিক্ত হিসাবে রাখা হয়েছিল পিচবোর্ডের বাক্স। সেটিও উপচে বাইরে পড়ছে খাম। অনেকে বিনা খামেই ছাপানো আবেদনপত্রের বয়ান পূরণ করে জমা দিয়েছেন। ব্লক অফিসে সিঁড়ির নীচে রাখা সেই বাক্স ভর্তি আবেদনপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে এ-দিক ও-দিক।
নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন জমা দিচ্ছেন আমপানের আবেদনপত্র?
বেনাচাপড়ার সুধীর বাগদি, শ্যামনগরের তাপস মণ্ডল সহ কয়েকজন বলেন, ‘‘সবাই বলছে ব্লক অফিসে দরখাস্ত নিচ্ছে, তাই দিতে এসেছি। যদি পাই ক্ষতিপূরণ!’’ আমলাগোড়া, গড়ঙ্গা এলাকার কয়েকজন বলেন, ‘‘অনেকেরই ঝড়ে কিছুই হয়নি তবু টাকা পেয়ে গিয়েছে। তাই আমরাও আবেদন করেছি। যদি টাকা পাই পুজোর আগে কাজে লাগবে।’’
গড়বেতা ১-এর যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর বলেন, ‘‘সবাইকেই বলা হচ্ছে, আর আবেদন জমা নেওয়া হবে না। তবুও প্রতিদিনই আসছেন অনেকে। আবার অনেকে আবাস যোজনার আবেদনও করছেন। সরকারি নির্দেশিকা না থাকায় আমরা কোথাও আবেদনপত্র জমা নিচ্ছি না, ওঁরা নিজেরাই রেখে দিয়ে যাচ্ছেন।’’ কী করবেন এগুলি? তিনি বলেন, ‘‘সেটাই ভাবছি! দেখি সরকারি নির্দেশিকা কিছু আসে কি না।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষও বলেন, ‘‘সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমপানের আবেদন বহু পড়েছে। দেখছি কী করা যায়।’’
প্রায় একই ছবি গড়বেতা ৩ (চন্দ্রকোনা রোড) ব্লকেও। আমপানের ক্ষতিপূরণ পেতে অনেকে আবেদনপত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন ব্লক অফিসে। গড়বেতা ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ সিংহ বলেন, ‘‘বহু আবেদন জমা আছে, নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনেকে জমা দিয়ে গিয়েছেন। নতুন নির্দেশ না এলে তো কিছু করা যাবে না।’’