মারাদোনার বাম রাজনীতির প্রতি ঝোঁক কারও অজানা নয়। কিউবার প্রায়ত রাষ্ট্রপতি তথা বামপন্থী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর সখ্যের ছবিও এক সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে থাকত। ফিদেলের কাছের মানুষ হওয়ার পাশাপাশি, মারাদোনা ছিলেন আমেরিকা বিরোধী। ১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল বিশ্বকাপে তাঁর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ওযুধ সেবনের অভিযোগ উঠেছিল।
ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে ফুটবলের রাজপুত্র নগরে। নিজস্ব চিত্র।
এ বার প্রয়াত ফুটবলের রাজপুত্রের শরণাপন্ন সিপিএমের যুব সংগঠন। আগামী মে মাসের ১২-১৫ তারিখ বিধাননগরের ইজেডসিসি-তে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলন। সেই সম্মেলন স্থলের নাম দেওয়া হচ্ছে ফুটবলের রাজপুত্র দিয়োগো আরমান্দো মারাদোনার নামে। বাম জমানার প্রায় অন্তিম পর্বে ২০০৮ সালে সিপিএমের তৎকালীন সাংসদ শমীক লাহিড়ী ও ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর উদ্যোগে কলকাতায় আনা হয়েছিল তাঁকে। বামমনস্ক মারাদোনাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছেও। এ বার সেই প্রয়াত ফুটবলারের নামেই সম্মেলন নগরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। কিংবদন্তি বিদেশি ফুটবলারের নামাঙ্কিত অনুষ্ঠান স্থলেই হবে রাজনৈতিক ভাষণ।
মারাদোনার বাম রাজনীতির প্রতি ঝোঁক কারও অজানা নয়। কিউবার প্রায়ত রাষ্ট্রপতি তথা বামপন্থী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর সখ্যের ছবিও এক সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে থাকত। ফিদেলের কাছের মানুষ হওয়ার পাশাপাশি, মারাদোনা ছিলেন আমেরিকা বিরোধী। ১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল বিশ্বকাপে তাঁর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ওযুধ সেবনের অভিযোগ উঠেছিল। ফলে বিশ্বকাপের মাঝপথেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফুটবল দল থেকে। আমেরিকার বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই এমন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে, এমন অভিযোগ করেছিলেন তাঁর অনুরাগীরা। তাতে দমে না গিয়ে বাহুতে বামপন্থী বিপ্লবী চে গেভারার ছবি উল্কি করিয়েও নিজের বাম-প্রীতির পরিচয় দিতেন প্রকাশ্যেই। সঙ্গে তাঁর অসংযমী জীবনযাপন-সহ মাদক সেবনের অভিযোগও তাড়া করেছিল জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
এমন একজন বির্তকিত কিংবদন্তীকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছে রাজনীতির প্রাঙ্গণের জন্য? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিওয়াইএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইব্রাহিম আলি বলেন, ‘‘মারাদোনা ছিলেন বামমনস্ক। তাঁর প্রয়াণের পরেও তিনি বিশ্বব্যাপী ছাত্রযুবদের আইকন। তেমন একজন মানুষকে সম্মান জানাতেই আমরা তাঁর নামে মঞ্চ তৈরি করছি। এ ভাবে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধাও জানাচ্ছি। কারণ তাঁর মতো ফুটবলার আর হয় এই পৃথিবীতে আসবে না। তাই একটু ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে কোনও পার্টির নেতা নয়, একজন এমন মানুষকে আমরা শ্রদ্ধা জানাব, যিনি সারা বিশ্বের কাছে বন্দিত হয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজনীতিতে সম্মেলন স্থলকে এবং মঞ্চকে কোনও প্রয়াত নেতার নামেই করার রেওয়াজ। কিন্তু এই প্রথম ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে একজন প্রয়াত বিদেশি ক্রীড়াবিদকে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।