মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে কেন ‘একক’ ভাবে যুব সংগঠনের নামে ব্রিগেড ডাকা হল, তা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের ‘ফ্র্যাকশন কমিটি’র বৈঠকে সেই প্রশ্ন তুলে ছাত্রনেতারা কার্যত বার্তা দিয়েছিলেন, ভোটের আগে একক ভাবে ব্রিগেড ডাকা খুব একটা রাজনৈতিক বিচক্ষণতা হয়নি। দেখা গেল, তার পরেই জেলা স্তরে যুব সংগঠনের ‘ইনসাফ যাত্রা’ এবং ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে যুবদের সঙ্গে ছাত্রদেরও জুড়ে দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
আগামী ৩১ অক্টোবর, মঙ্গলবার হুগলির উত্তরপাড়া গণভবনে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআইয়ের নামে সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। তাতে মূল বক্তা যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় হলেও জেলার ছাত্র-যুব নেতৃত্বও ভাষণ দেবেন। সাধারণ সভার যে চিঠি দলের অভ্যন্তরে বিলি করা হচ্ছে, তাতে যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদক শুভঙ্কর দাসের পাশাপাশি নাম রয়েছে ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদক নবনীতা চক্রবর্তীরও।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি শুধু নয়, অন্যান্য জেলাতেও যাত্রার রুট, সেই পথে সাজানোগোছানো, পদযাত্রীদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা, জমায়েত করে হাঁটানো— গোটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়াটাই করা হচ্ছে ছাত্র সংগঠনকে জুড়ে নিয়ে। যাতে ক্ষোভের আঁচ না পড়ে। ডিওয়াইএফআইয়ের হুগলি জেলা সম্পাদক শুভঙ্কর বলেন, ‘‘যুব সংগঠনের নামে ‘ইনসাফ যাত্রা’ বা ব্রিগেড সমাবেশ হলেও ছাত্রদের যুক্ত করেই সব কাজ করা হচ্ছে। কারণ এটা তারুণ্যের কর্মসূচি।’’ যদিও ঘরোয়া আলোচনায় ছাত্রনেতারা খোলাখুলিই বলছেন, ‘চাপ’ না দিলে পরিকল্পনা করার জায়গায় তাঁদের যুক্ত করা হত কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ছাত্রনেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন ‘একক’ ভাবে যুব সংগঠন ব্রিগেড সমাবেশ করবে? কেন ছাত্র-যুব যৌথ ব্রিগেড করা গেল না? অক্টোবরের প্রথম দু’সপ্তাহে এসএফআই রাজ্যের ২০টি জেলায় আকারে বড় মিছিল করেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে ছাত্র নেতৃত্ব প্রশ্ন তোলেন, যখন ছাত্র সংগঠন রাস্তায় থেকে আন্দোলন করছে, তখন ব্রিগেড থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্ন করা হল কেন? সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছিল, উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার, মালদহ, হুগলি এবং কলকাতার একটি অংশ-সহ দলের ফ্র্যাকশন কমিটির বৈঠকে ছাত্র নেতৃত্ব বলেন, দল বলছে ‘তারুণ্যের ব্রিগেড’। ছাত্ররা কি তারুণ্যের মধ্যে পড়ে না?
ইতিমধ্যেই সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে প্রতিটি জেলা কমিটিকে বলা হয়েছে, ব্রিগেড ভরাতে গোটা দলকেই নামতে হবে। যুব সংগঠনও জানে, তাদের পক্ষে কালো কালো মাথা দিয়ে ব্রিগেড ভরানো সম্ভব নয়। তাই কৌশলে স্লোগানও ঠিক করা হয়েছে বলে অভিমত অনেকের। যে ‘লোগো’ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে ‘যৌবনের ডাকে, জনগণের ব্রিগেড’। প্রসঙ্গত, শনিবার রাজ্য সিপিএমের মুখপত্রে এই একই মর্মে নিবন্ধ লিখেছেন যুব সংগঠনের মুখপত্রের সম্পাদক কলতান দাশগুপ্তও।
৭ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাম যুব সংগঠনটি। তবে বক্তাদের তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মনে করা হচ্ছে, পরে হলেও ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ ছাত্র সংগঠনের দু’এক জন নেতাকে বক্তার তালিকায় রাখা হলেও হতে পারে।