তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। (ডান দিকে) বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ফাইল চিত্র।
তিনি যখন ভারতে, তখন দুবাই থেকে তাঁর সংসদীয় আইডিতে লগ ইন করা হয়েছে। ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে গোটা দেশের। ‘টাকা নিয়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া তাঁর সংসদের আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়েছিলেন। সেই লগ ইন এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে হীরানন্দানি আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন নথিভুক্ত করতেন। আর সেই প্রশ্নই সংসদে তুলে ধরতেন মহুয়া।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে মহুয়াকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করারও দাবি জানিয়েছেন নিশিকান্ত। স্পিকার গোটা বিষয়টি লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন। কমিটির শুনানি শুরুও হয়েছে। যদিও তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। লগ ইন প্রসঙ্গে এথিক্স কমিটির প্রধান বিজেপির সাংসদ বিনোদ সোনকর বলেছেন, ‘‘সংসদের লগ ইন আইডি সাংসদ ছাড়া দিয়ে অন্য কারও ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ। যে অভিযোগ উঠেছে, তা সংসদের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’’ মহুয়া অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, সাংসদদের লগ ইন করার বিষয়ে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনুক এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার)। তাঁর আরও দাবি ছিল, সমস্ত সাংসদের লগ ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড প্রকাশ করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, আরও কেউ ওই একই কাজ করেন কি না। ঘটনাচক্রে, প্রত্যেক সাংসদকে দু’টি করে লগ ইন আইডি দেওয়া হয়। একটি সাংসদের নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে, অন্যটি সরকারি পোর্টালের। যেটি থেকে প্রশ্ন নথিভুক্ত করানো যায়। সেই পোর্টালের লগ ইন আইডি দেওয়া নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
সাংসদরা অন্য কাউকে লগ ইন, পাসওয়ার্ড দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে মহুয়ার বিরুদ্ধে যখন বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, তখন ইমেল অ্যাকাউন্টের বিষয়ে এনআইসির শর্ত কী বলছে? সাংসদের ইমেল অ্যাকাউন্ট, ইউজ়ার আইডি এবং পাসওয়ার্ডের বিষয়ে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে এনআইসির। নতুন কোনও ইমেল অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সেই শর্ত মেনে এনআইসির ফর্ম পূরণ করতে হয়। ইমেল ব্যবহার করার জন্য লগ ইন এবং পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে এনআইসি-র সেই ফর্মে যে যে শর্তগুলি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল—
• ইমেল ব্যবহারকারীদের ইউজ়ার আইডি এবং পাসওয়ার্ড গোপন রাখতে হবে।
• তিন মাসে অন্তত এক বার পাসওয়ার্ড বদলাতে হবে। যদি তা না করা হয়, তা হলে সেই অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করা হতে পারে। সেই অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ হয়ে গেলে অপপ্রয়োগও হতে পারে।
• সেই ‘হ্যাক’ হওয়া অ্যাকাউন্টের যদি অপপ্রয়োগ হয়, তার জন্য দায়ী থাকবে না এনআইসি। বার বার সেই অ্যাকাউন্টের অপপ্রয়োগ হলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাই নজরদারি চালিয়ে সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেবে।
• কোনও অচেনা এবং অজানা সূত্র থেকে কোনও অ্যাটাচমেন্ট এলে তা না খোলাই শ্রেয়। সেই ধরনের ইমেলগুলি না খুলে মুছে দেওয়া উচিত। কারণ, সেগুলিতে ভাইরাস থাকতে পারে। ফলে কম্পিউটার ‘করাপ্ট’ হতে পারে।
• ইমেল অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যক্তিগত ফায়ারওয়াল সফ্টঅয়্যার এবং অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
• ইমেলে যে ‘কনটেন্ট’ পাঠানো হচ্ছে, তার জন্য দায়ী নয় এনআইসি।
• ইমেল পরিষেবার জন্য নিরাপদ চ্যানেলগুলিকে ব্যবহার করে এনআইসি।
• অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর তথ্য যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ করবে এনআইসি।
• অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী যদি কোনও তথ্য ভুলবশত মুছে ফেলেন, তা হলে সেই তথ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এনআইসিকে অনুরোধ করতে পারবেন না।
• ইমেলের বার্তা ‘সেভ’ করে রাখার দায়িত্ব অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে সেই বার্তাগুলি মুছে যাবে।
• ৯০ দিন কোনও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করা হলে এনআইসি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেবে।
• যদি ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কোনও রকম অনুরোধ না আসে, তা হলে এনআইসি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হওয়ার দিন থেকে ন’মাসের মধ্যে ব্যবহারকারীর ইমেল আইডি-ও বাতিল দেওয়া হবে।
• সংশ্লিষ্ট সাংসদের ইমেল অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য, ইমেল আইডি তাঁর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনও কিছুই প্রকাশ করবে না এনআইসি।