সীতারাম ইয়েচুরি। —ছবি সিপিএমের ফেসবুক।
ইডি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে না। কাজ করছে রাজনৈতিক স্বার্থে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে শুক্রবার এই ভাষাতেই সরব হলেন সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য পড়তে না পড়তেই লুফে নিল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা এই কথা অনেক দিন ধরেই বলছি। ইয়েচুরি তো আমাদের কথাই বললেন।’’
শুক্রবার হাওড়ায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন শুরু হল। উদ্বোধনী বক্তৃতায় ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ইডি কি আদৌ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে? না। তারা রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করছে। বিজেপি সরাসরি রাজনৈতিক যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে।’’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘‘তার মানে কি দুর্নীতি হয়নি? হয়েছে। বাংলায় কী দুর্নীতি হয়েছে আপনারা জানেন। কিন্তু ইডি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে না। পাঁচ হাজারের বেশি মামলার তদন্ত করছে। মাত্র ২৩টির নিষ্পত্তি হচ্ছে। তদন্ত সঠিক ভাবে করে মামলার নিষ্পত্তি করুক। তা না করে হেনস্থা করা হচ্ছে।’’
তৃণমূল প্রায় নিয়ম করে বলে— ইডি, সিবিআই এখন আর তদন্তকারী সংস্থা নেই। তারা বিজেপির ‘শাখা সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে। বাংলায় ইডির হাতে সর্বশেষ বড় গ্রেফতার রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। রেশন দুর্নীতি মামলায় সল্টলেকে যে দিন বালুর বাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, সে দিনই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ইডির তলব, রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ছেলে বৈভবকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও কয়েক দিন আগে মমতা বলেছিলেন, ‘‘ওরা কী ভেবেছে? সবাইকে গ্রেফতার করে দেশটাকে ভোটের আগে ফাঁকা করে দিয়ে নিজেরা সব ভোট দেবে?’’ ইয়েচুরিও শুক্রবার বলেন, তাঁর ও তাঁর দলের সঙ্গে আম আদমি পার্টির মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে ইডি ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তা নিন্দনীয়। সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘আবগারি দুর্নীতি হয়েছে। এতে অভিযুক্ত ওয়াইএসআর কংগ্রেসের এক নেতা। তাঁকে না-ধরে ইডি তাঁর কে পরিচিত রয়েছেন, সেখানে যাচ্ছে।’’ ইয়েচুরি আরও বলেন, ‘‘যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা বিজেপিতে চলে গেলেই আবার ইডি চুপ করে যাচ্ছে। এ থেকেই স্পষ্ট হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা কী।’’
সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের কথার প্রেক্ষিতে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল বলেন, ‘‘ইয়েচুরির উচিত, মাস্টারমশাইয়ের মতো বাংলার ফেল করা নেতাদের বোঝানো। যাঁরা ইডি, সিবিআই নিয়ে বেশি নাচানাচি করেন।’’ প্রসঙ্গত, গত ৫ অক্টোবর ইডি এবং সিবিআই দফতর অভিযান করেছিল সিপিএম। সীতারামের শুক্রবারের এই বক্তব্য কি বঙ্গ সিপিএমকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অস্বস্তির কিছু নেই তো। সীতারাম যা বলেছেন, আমরা রাজ্যে যা বলছি তা তো আলাদা নয়। আমরা তো বলছি, অনন্তকাল ধরে তদন্ত করা যাবে না। দ্রুত তা শেষ করতে হবে। এবং মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।’’
রাজস্থান পুলিশের হাতে ইডি কর্তার গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এক দিকে যেমন ইডিকে দিয়ে আক্রমণ করানো হচ্ছে, তেমন প্রতিরোধের মুখেও পড়তে হচ্ছে।’’ নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিতে গিয়ে রাজস্থান পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার (এসিবি) হাতে এক ইডি অফিসার গ্রেফতার হয়েছেন বুধবার। বিধানসভা ভোটের আগে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনার জেরে মরুরাজ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সেই গ্রেফতারিকে ইয়েচুরি ‘রেজিস্ট্যান্স’ (প্রতিরোধ) বলে উল্লেখ করলেন।