মেয়ো রোডে সিপিআইয়ের সমাবেশ।—নিজস্ব চিত্র।
বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলেই বিজেপির রাজনীতিকে পরাস্ত করার ডাক দিল সিপিআই। গেরুয়া শিবিরের ‘মিথ্যা প্রচারে’র মোকাবিলায় গ্রামে ও শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচতেনতা তৈরির কথাও বলল তারা।
কলকাতায় সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদের যে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে রবিবার, সেখানে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে সঙ্ঘ ও বিজেপির মোকাবিলায় বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার দিকে আরও নজর দিতে হবে। কোল্লমে সিপিআইয়ের বিগত পার্টি কংগ্রেসেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য এবং শ্রেণিভিত্তিক ঐক্য— এই দুই দিকেই প্রসার ঘটানোর ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই আহ্বান বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে খামতি রয়ে গিয়েছে বলে মেনে নিয়েই সিপিআই বলছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ঘিরে এখন যা চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর প্রতিরোধ আরও জরুরি। ভূপেশ ভবনে বিকালে বৈঠক শুরুর আগে এ দিন মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সমাবেশ থেকেও একই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিহারের মুজফ্ফরপুরে পদযাত্রায় থাকায় কলকাতার সমাবেশে ছিলেন না সিপিআইয়ের এই মুহূর্তের জনপ্রিয় মুখ কানহাইয়া কুমার। দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা সমাবেশে বলেন, ‘‘সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে যে ভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। সংসদে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন, সিএএ নাকি মোহনদাস গাঁধীর ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। গাঁধীজি কখনও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কথা বলেননি। ‘সব কো সম্মতি’র জন্য গাঁধীজি যে প্রার্থনা করতেন, এখন তিনি থাকলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে ‘সম্মতি’ (সুমতি) দেওয়ার কথা বলতেন!’’ সিপিআই নেত্রী এবং এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউর বলেন, ‘‘আমাদের দলের বয়স ৯৫ বছর। ব্রিটিশদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল। আরএসএস ব্রিটিশের গোলামি করত! আর এখন আমাদের লড়তে হচ্ছে স্বাধীন দেশে মানুষকে গোলাম বানানোর চেষ্টা যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে।’’ কৃষক ফ্রন্টের অতুল আনজান, মহিলা ফেডারেশনের অ্যানি রাজা প্রমুখও বক্তা ছিলেন।
বাংলায় সমাবেশ হলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণে যাননি রাজারা। পরে এই বিষয়ে রাজার ব্যাখ্যা, ‘‘এটা ঠিক যে, রাজ্যওয়াড়ি রাজনৈতিক সমীকরণ আলাদা। তবে দেশে এখন যা পরিস্থিতি বিজেপি সৃষ্টি করেছে, একা কংগ্রেস, সিপিএম বা সিপিআইয়ের পক্ষে তার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই আমরা জাতীয় স্তরে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্যের কথা বলছি।’’ সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রাজ্যের শাসক দলকেও বিঁধে বলেছেন, ‘‘বাম-বিরোধিতার কর্মসূচির সূত্রে এ রাজ্যে বিজেপিকে এনে খাল কেটে কুমির ডেকেছিল তৃণমূল! এখন তৃণমূল সিএএ-র প্রতিবাদ করছে আবার জলঙ্গিতে প্রতিবাদীদের উপরে গুলিও চালাচ্ছে!’’