Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ব্যর্থ কংগ্রেস, দেশ চায় তৃণমূলকেই, নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা, বললেন মমতা

‘বাংলা নেতৃত্ব দিক’ কথাটির মর্মার্থ আসলে বিরোধী মঞ্চে মমতার নেতৃত্বকেই প্রতিষ্ঠা করা। যদিও মমতা নিজেই বলেন, কে নেতা হবেন, সেটা বড় কথা নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২০
Share:

তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

এত দিন তাঁর দলের বিভিন্ন নেতা যা বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের দৈনিক মুখপত্রে ইদানীং যা লেখা হচ্ছে, তাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তাঁর কথায়, “সময়ের যাত্রাপথে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে আসল লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছে এই তৃণমূল কংগ্রেসই। দেশের মানুষ এখন তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখছেন।”

Advertisement

কয়েক দিন আগেই তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “বিজেপির বিকল্প মুখ হতে রাহুল গাঁধী ব্যর্থ। মমতাই পারবেন।” এ বার দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যায় প্রবন্ধে মমতা লিখেছেন, “বাংলার সীমা অতিক্রম করে একের পর এক রাজ্য থেকে ডাক আসছে, আপনারা আসুন। নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা।”

তৃণমূলের এই অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, বিজেপির ‘নেপথ্য মদতে’ই মমতার দল কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছে এবং বিরোধী ঐক্যকে নড়বড়ে করে দিতে চাইছে।

Advertisement

পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘বাংলা নেতৃত্ব দিক’ কথাটির মর্মার্থ আসলে বিরোধী মঞ্চে মমতার নেতৃত্বকেই প্রতিষ্ঠা করা। যদিও তিনি নিজে বার বারই বলেন, কে নেতা হবেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল হল বিজেপিকে হটানো। সেই ভাবেই আলোচ্য প্রবন্ধেও তিনি লিখেছেন, “দেশের মানুষের দাবি, দিল্লির মসনদ থেকে সরাতে হবে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী বিজেপিকে। মানুষের আশা ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে।” এই সূত্রেই তাঁর ব্যাখ্যা, “বিকল্প জোটের নেতৃত্ব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কিন্তু বাস্তবটা কংগ্রেসকে অনুভব করতে হবে। অন্যথায় বিকল্প শক্তির গঠনে ফাঁক থেকে যাবে।”

কী সেই ‘বাস্তব’? মমতা লিখেছেন, “সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেস দিল্লির দরবারে বিজেপিকে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। গত দু’টি লোকসভা নির্বাচন তার বড় প্রমাণ।” তাঁর অভিমত, “দিল্লিতে যদি লড়াই না থাকে, তা হলে মানুষের মনোবল কমে যায় এবং লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যগুলিতেও বিজেপি কিছু বাড়তি ভোট পেয়ে যায়। সেটা এ বার কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।” পাশাপাশি, বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূলের ভূমিকা তুলে ধরে মমতার বক্তব্য, “বাংলার এ বারের নির্বাচনে গোটা দেশ দেখেছে, বিজেপির সর্বশক্তিকে কী ভাবে তৃণমূল হারিয়ে দিয়েছে। যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন (আসলে ডোবাচ্ছেন), তাঁরা সকলেই তো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলেন। কুৎসা করলেন। এজেন্সি নামালেন। তবু তৃণমূলকে হারাতে পারলেন না। এটা একটা ইতিহাস। এটা একটা মডেল। দেশের মানুষ এই মডেলের উপর ভরসা রাখছেন।”

একই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ সকলকে নিয়ে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও মমতা প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। সেখানে তাঁর বক্তব্য, “আমরা কখনওই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মঞ্চের কথা ভাবছি না, বলছি না।” এই সূত্রেই তিনি লিখেছেন, “নিজেদের অঙ্কে নয়, দেশের স্বার্থে একজোট হতে হবে। বিকল্প মঞ্চ শক্তিশালী করতে হবে। সেই মঞ্চ হবে নীতির ভিত্তিতে, কর্মসূচির ভিত্তিতে।”

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের অবশ্য বক্তব্য, “তৃণমূল তাদের কাজকর্মে নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে চাইছে! তাঁর প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদী না রাহুল গাঁধী, সেটা আগে স্পষ্ট করুন তৃণমূল নেত্রী! কংগ্রেস তাঁর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে?”

তৃণমূল নেত্রীর এ বারের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরের ঘটনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন অধীর। তিনি বলেছেন, “লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভারতের দু’টো দলকে বিজেপি পিছন থেকে মদত করছে শুধু কংগ্রেসকে খতম করার জন্য! একটা দলের নাম আপ, আর একটা দলের নাম তৃণমূল। লখিমপুরেও বাকি সবাইকে রুখে দিয়ে ওদের যেতে দেওয়া হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য, “এটা একটা ছক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে যেখানে কংগ্রেস লড়াই করছে, সেখানে তৃণমূল গিয়ে কংগ্রেসের ক্ষতি করবে এবং বিজেপিকে ঘুরিয়ে সাহায্য করবে। আর বাংলায় ভাযণবাজি হবে— মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়তে পারে না, তৃণমূল লড়ে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement