‘দুঃখিনী বর্ণমালা’ না ‘দেশের সেরা’, উঠেছে জোর বিতর্ক

লোকসভা ভোটে রাজ্যে বেনজির সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার অভিযোগে সরব সব বিরোধী দলই।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত

পুজোর বাজারেও উঠে এল সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক।

Advertisement

লোকসভা ভোটে রাজ্যে বেনজির সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার অভিযোগে সরব সব বিরোধী দলই। কিন্তু এই আবহেই বাংলায় সংখ্যালঘু উন্নয়নের হাল নিয়ে শাসক তৃণমূলকে শারদ সংখ্যার মোড়কে বিঁধল বিরোধী কংগ্রেস। উৎসব সংখ্যাকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূলের আবার পাল্টা দাবি, ‘সংখ্যালঘু উন্নয়নে বাংলাই দেশের সেরা’। দু’পক্ষেরই হাতিয়ার পরিসংখ্যান ও পাল্টা তথ্য!

প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় সংখ্যালঘু-প্রশ্নে কলম ধরেছেন আব্দুস সাত্তার। যিনি সিপিএমে থাকাকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সাত্তারদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের অস্ত্র ছিল সাচার কমিটির রিপোর্ট। এ বার শারদ সংখ্যায় ‘দুঃখিনী বর্ণমালা’ লিখে সাত্তার দেখিয়েছেন, সাচার কমিটির রিপোর্টের পরে যতটুকু করার, কেন্দ্রের কংগ্রেস ও রাজ্যের বাম সরকারই করেছিল। তার পরে প্রচার হয়েছে অনেক, কাজ হয়নি। আর তৃণমূলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যায় তথ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে, সংখ্যালঘু উন্নয়নে মমতার সরকার বিপুল টাকা বরাদ্দ ও খরচ করেছে।

Advertisement

সাত্তারের বিশ্লেষণে, সংখ্যালঘুদের কথা উঠলেই গেরুয়া শিবির ‘তোষণ’ নিয়ে চলে আসছে! আবার বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে, এই ‘জুজু’ দেখিয়ে রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে অনেক প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে রেখেছে। এই বিষয়ে যথেষ্ট সরব না হওয়ায় বিরোধী দলগুলিকেও অবশ্য কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর কলম অনুযায়ী, ‘যে কাজগুলি তৃণমূল সরকারের করার কথা ছিল, সুকৌশলে, সযত্নে, ধর্মীয় জুজু দেখিয়ে তারা তা এড়িয়ে গিয়েছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত বিরোধী দলগুলির উদাসীনতাও সরকারের এই কাজে এই সহায়ক প্রতিপন্ন হয়েছে’।

তথ্য উল্লেখ করে অধুনা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাত্তার দেখাচ্ছেন, ৪০৫টি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র ও ২০০টি ‘নিউ সেট আপ’ মাদ্রাসা আজও অনুমোদন পায়নি। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মাদ্রাসাগুলিতে অর্ধেকের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য, শিক্ষাকর্মী অপ্রতুল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির বিষয়টি বাক্সবন্দি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে অনুমোদিত ২৩৮টি মাদ্রাসারও সমস্যার শেষ নেই। সাত্তারের মতে, ‘কেন্দ্রে কংগ্রেস ও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সাচার কমিটির সুপারিশ ও তার রূপায়ণের বিবরণ সেই সময়কার সরকারি দলিলে স্পষ্ট রূপে মুদ্রিত আছে। চাইলেই যে কেউ এই বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে পারেন’।

নিজেদের উৎসব সংখ্যায় তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের বাজেট বরাদ্দ প্রায় ৮ গুণ বেড়ে ৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা হয়েছে। ওই দফতর রয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই। প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা ও তাঁর দফতরের দাবি, দু’কোটি ৩৬ লক্ষেরও বেশি সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। তার আর্থিক মূল্য ৫৮৫৭ কোটি টাকার বেশি। সংখ্যালঘু ৮ লক্ষের বেশি যুবক-যুবতীকে ১৩০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। সরকার অনুমোদিত ৪৬৯টি মাদ্রাসায় কম্পিউটার স্মার্ট ক্লাস চালু হয়েছে। সাড়ে চার হাজার কবরস্থানের চার দিকে পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। এ সবই ‘দেশের সেরা’ বলে শাসক দলের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement