প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি
ফরাক্কা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর গঙ্গা ভাঙনের জেরে তলিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমি। এর জেরে তুমুল সমস্যার সম্মুখীন হন এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙন সংক্রান্ত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই চিঠিতে মমতা লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ নদীকেন্দ্রিক একটি রাজ্য। ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছিল গঙ্গার ৪০ হাজার কিউসেক জল ভাগীরথী-হুগলি নদীতে পাঠানোর জন্য। কিন্তু তার ফলে নদীর দুই ধারে প্রচুর পরিমাণ পলি জমছে। যাতে নদীর পাড় ভাঙছে প্রতি বছর। এই সমস্যার দিকে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিহার সরকারও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিঠিতে মমতা এ-ও জানিয়েছেন, প্রতি বছর গঙ্গা ভাঙনের জেরে গঙ্গা এবং ফুলহার নদীর মধ্যবর্তী সমতলের পরিধিও ক্রমশ কমছে। ২০০৪ সালে দুই নদীর মধ্যে ৪ কিলোমিটার দূরত্ব ছিল। বর্তমানে তা হয়েছে মাত্র দেড় কিলোমিটার। এর ফলে সংলগ্ন এলাকার মানুষ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সংযোগকারী ১৩১এ জাতীয় সড়কও।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি চিঠিতে ফরাক্কা ব্যারেজ সংক্রান্ত সমস্যায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন মমতা। কেন্দ্রের জল শক্তি মন্ত্রী তার উত্তরে জানিয়েছিলেন ৩৪২ কোটি টাকা খরচ করে ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফরাক্কায় ভাঙন-বিরোধী সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ওই একই এলাকায় তার পরেও বার বার নদীর পাড় ভেঙেছে। তাই এ বার সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বিষয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পের আধিকারিকদের পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার সরকারের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা বলেছেন মমতা। ফরাক্কার পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপের আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গঙ্গা নদীর উপর বাংলাদেশেও একটি বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে রাজ্যে ভূমিক্ষয়ের সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তাই কেন্দ্রের প্রকল্প পূনর্মূল্যায়ণ প্রয়োজন। অভিযোগ, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একাধিক বার রাজ্য সরকারের তরফে এ বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এ পর্যন্ত যা করেছে, সবটাই লোক দেখানো। বরং রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র ভাবে নদীর পাড় সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়েছে। ৩১টি ক্ষয়প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করা হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা।
গঙ্গা ভাঙনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপের অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করার অনুরোধও করা হয়েছে।