রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগে অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। আঙুল অভিষেকের (বাঁ দিকে) দিকে। — ফাইল ছবি।
তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ‘কুরুচিকর অশ্লীল’ মেসেজ করা হচ্ছে জানিয়ে রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগে অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগের আঙুল তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। পরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানালেনও সে কথা। শুভেন্দু লিখলেন, দুর্নীতিতে মদত দেওয়ার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ ঘোষণা করেছেন’ তৃণমূল সাংসদ।
ওই অভিযোগ করার পাশাপাশিই শুভেন্দু প্রচ্ছন্ন এবং পরোক্ষ ভাবে এ-ও জানিয়ে রেখেছেন যে, পুলিশ ওই বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। শুভেন্দু তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, পুলিশ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এই বিষয়ে আমার উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন হবে না।’’
তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে চায়নি। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা আঙুল তুলেছেন ‘আদি বিজেপি’, সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ঘনিষ্ঠদের দিকে। পুলিশের কাছে শুভেন্দুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর মনে হয়েছে করেছেন। উনি যাকে-তাকে যা নয় তা-ই বলে গালাগাল করে বেড়াবেন, সে-ও তো খারাপ কাজ! যদি কেউ ওঁর ফোনে খারাপ কথা লিখে থাকেন, তা হলে তা ঠিক নয়।’’ এর পরেই কুণাল পাল্টা আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকে। পদ্মশিবিরের গোষ্ঠীকোন্দলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘উনি (শুভেন্দু) খুব সন্তর্পণে ফোন ব্যবহার করেন। যাকে-তাকে নম্বর দেন না। এই সুযোগে আদি বিজেপি, দিলীপ-বিজেপি, সুকান্ত-বিজেপিরা ওঁকে গালাগাল করে দিল কি না, সেটাও তো দেখতে হবে।’’
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে একটি পোস্টে শুভেন্দু জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে ক্রমাগত ‘অশ্লীল’ মেসেজ এসেছে তাঁর মোবাইলে। সেই নিয়ে রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখার দ্বারস্থ হয়েছেন। পাশাপাশিই, ওই শাখার ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি তিনি। যদিও আস্থা প্রকাশ করেছেন, তাঁর অভিযোগেরও সমাধান করবে রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখা।
শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘তোলাবাজ ভাইপোর লুম্পেন র্যাকেট সক্রিয় হয়ে আমার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কয়েক শত কুরুচিকর অশ্লীল মন্তব্য ও ব্যঙ্গচিত্র পাঠিয়েছিল গত দু’দিন ধরে। ভাইপো শুধু দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে বাংলার অর্থনীতিকে ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি, এ বার বাংলার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে।’’
এর পরেই সাইবার অপরাধ দমন শাখার ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে, এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ‘কুকথা’ বলে জেলে গিয়েছিলেন ইউটিউবার রোদ্দুর রায়। নাম না করলেও সেই প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিয়ে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘আশা করব, ইউটিউবারদের বিরুদ্ধে এই বিভাগ যে ভাবে সক্রিয় হয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতি সক্রিয়তার নিদর্শন পেশ করে, তেমন ভাবেই এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’ যে সব নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে মেসেজগুলি এসেছিল, সেই নম্বরগুলিও সমাজমাধ্যমে তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর রবিবারের যে টুইট ঘিরে বিতর্ক, সেখানে পুলিশকে খোঁচা দিয়েছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, ‘মমতা নিয়ন্ত্রিত পুলিশ’। যদিও বৃহস্পতিবারের পোস্টে রাজ্য পুলিশের উপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন তিনি। শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, পুলিশ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এই বিষয়ে আমার উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন হবে না।’’
অভিষেকের তিন বছরের ছেলের জন্মদিন উদ্যাপন নিয়ে গত রবিবার একটি টুইট করেছিলেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘কলকাতার একটি হোটেলে মহা ধুমধাম করে অভিষেকের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে ৫০০ পুলিশ, এমনকি বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর। আর এই গোটাটাই হচ্ছে মমতা নিয়ন্ত্রিত পুলিশের তত্ত্বাবধানে।’’
তৃণমূল এই টুইটকেই ‘মিথ্যাচার’ বলে উল্লেখ করেছে। কুণাল বলেছিলেন, বিরোধী দলনেতা ‘অভিষেক ফোবিয়া’-য় ভুগছেন। তাঁর মানসিক সুস্থতা কামনা করে ‘গেট ওয়েল সুন’ লেখা কার্ড ও ফুল পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলের ছাত্র ও যুবকর্মীরা। রবিবারের টুইটটি নিয়ে বেলেঘাটা থানায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলাও দায়ের হয়েছে। এ বার শুভেন্দু পাল্টা অভিযোগ করলেন, তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে ‘কুরুচিকর’ মেসেজ পাঠানো হচ্ছে, যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।