পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘এই রাত তোমার আমার’ ছবির প্রচারে অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
পর্দায় তাঁদের একটি রাতের যাপন ৩১ জানুয়ারির জন্য তোলা। তার আগে ১৮ জানুয়ারি, অঞ্জন দত্তের প্রাক্-জন্মদিনের সন্ধ্যাও এক সঙ্গে কাটালেন অপর্ণা সেন। সঙ্গী ‘এই রাত তোমার আমার’ ছবির অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে বিয়ের ৫০ বছর পেরিয়ে আসে ‘অমর’ (অঞ্জন) এবং ‘জয়া’ (অপর্ণা)-র এক রাতের ভালবাসাবাসি ক্যামেরাবন্দি করেছেন পরিচালক। প্রযোজনায় রোড শো ফিল্মস। নিবেদনে হইচই স্টুডিয়ো।
দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত ক্লাব প্রাঙ্গনে মুক্তি পেল ছবির প্রথম ঝলক। আরও উপলক্ষ, অঞ্জনের জন্মদিনের আগাম উদ্যাপন। আনন্দবাজার অনলাইন তার সাক্ষী।
ছবি নিয়ে আড্ডার মাঝেই হাজির বড় চকোলেট কেক, শ্যাম্পেনের বোতল। অঞ্জন বরাবরের সাহেবি। এ দিনও তিনি স্যুট, প্যান্ট, কালো চশমায় ধোপদুরস্ত। অপর্ণা নকশা তোলা চওড়া লাল পাড় সাদা শাড়িতে অভিজাত। খোলা চুলে সাদা গোলাপ আর রুপোর গয়না। চোখ ঢেকেছিলেন বড় ফ্রেমের চশমায়। পর্দার সহধর্মিনীর সঙ্গে মঞ্চেই আলতো খুনসুটি। কেকের বুকে ছুরি চালানো। পাকা হাতে শ্যাম্পেনের ফোয়ারা ছোটানো। তাঁর ‘নায়ক’-এর নায়কোচিত হাব ভাবে একই সঙ্গে বিস্মিত এবং আপ্লুত পরমব্রত। চওড়া হেসে পাশে দাঁড়ানো অপর্ণাকে ফিসফিসিয়ে বললেন, “যাঁকে যা মানায়!”
অঞ্জনের প্রাক জন্মদিন উদ্যাপন।
উদ্যাপনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলেছে ছবি নিয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা। পরিচালককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই প্রথম পর্দায় জুটিতে অপর্ণা সেন-অঞ্জন দত্ত। পরিচালনার অভিজ্ঞতা কেমন? পরমব্রতর কথায়, “ছবিটি যেমন বিশেষ আমার কাছে তেমনই বিশেষ এঁদের নিয়ে কাজ করা। ৫০ বছর এক ছাদের নীচে কাটানো এক দম্পতির একটি রাতের গল্প। শুটিং শুরুর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত নানা ভাবে শুধুই শিখেছি। কখনও পরিচালক হিসেবে, কখনও অভিনেতা হিসেবে।” প্রথম দিন থেকে তিনি অপর্ণা-অঞ্জনকেই চেয়েছিলেন। দুই অভিনেতা রাজি না হলে তিনি ছবিটিই বানাতেন না।
ক্যামেরার পিছনে যিনি তিনি অভিনেতাও। আবার ক্যামেরার সামনে যাঁরা তাঁরা অভিনেতার পাশাপাশি পরিচালক। এতে বাড়তি সুবিধা কী? অপর্ণার ‘যুগান্ত’ ছবির অভিনেতা অঞ্জনের কাছে প্রশ্ন যেতে তিনি এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, সুবিধার পাল্লাই ভারী। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, “এক জন শুধুই পরিচালক হলে তিনি হয়তো বা খারাপ ছবি বানাতে পারেন। কিন্তু এক জন ভাল অভিনেতা কিছুতেই খারাপ ছবি বানাবেন না। এই ছবির পরিচালক তেমনই।” তাঁর মতে, আরও সুবিধে তাঁদের তিন জনের ভাবনা একই পথের পথিক। তাঁরা এক ধারার ছবি পছন্দ করেন। একই ধারার অভিনয়ে বিশ্বাসী। ফলে, আদানপ্রদান অনায়াস হয়েছে। এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভাবনা ভাগ করে নিতে পেরেছেন। পরিচালকের দাবি, “এই জায়গা থেকে ‘এই রাত তোমার আমার’ ছবিটি আমার নয়, আমাদের হয়ে উঠেছে।”
ছবির ঝলক দেখছেন অঞ্জন-অপর্ণা।
ছবির প্রথম ঝলক অনুযায়ী, নায়িকা ক্যানসারে আক্রান্ত। এক মাত্র সন্তান (পরমব্রত) আজকের মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ফলে, অমর-জয়া পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল। ছবিতে একটি মাত্র রবীন্দ্র গান ‘তুমি রবে নীরবে’, সেটি গেয়েছেন অঞ্জন স্বয়ং। এত অল্পবয়সে এত ভারী ভাবনাকে পর্দায় তুলে দেখানোর ইচ্ছে কেন জাগল পরমব্রতর? কেন ছবির নাম এত গীতিমুখর অথচ ছবিতে মাত্র একটি গান? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
নিমেষে পরিচালকের খোলস ছেড়ে ব্যক্তি পরমব্রত প্রকাশ্যে। অল্প হেসে বললেন, “প্রথম প্রশ্নের পিছনে দুটো কারণ। এক, ছবির গল্প প্রথম শুনিয়েছিলেন এক দক্ষিণী কাহিনিকার। গল্পটি এত ভাল লেগেছিল যে আমি তাঁর কাছ থেকে গল্পটি নিয়ে রাখি। সেটিকেই ঘষেমেজে আমাদের শহরের উপযোগী করা হয় পরে।” তাঁর দ্বিতীয় কারণ, পরিচালকের হারিয়ে যাওয়া মা-বাবা সুনেত্রা ঘটক, সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরমব্রতর কথায়, “২০ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। তার ২৩ বছর পরে মাকে। ওঁদের বার্ধ্বক্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। গল্পটা শুনতে শুনতে মনে হয়েছিল, মা-বাবা থাকলে বোধহয় পর্দার অঞ্জনদা-রিনা মাসির মতো করেই থাকতেন। বলতে পারেন, ওঁদের দিয়ে আমার হারিয়ে ফেলা মা-বাবাকে ফিরে দেখতে চেষ্টা করেছি।” দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, ছবি জুড়ে সুরের আবহ তৈরি করেছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। ছবির কারণেই মাত্র একটি গান।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি পরমব্রত, অপর্ণা, অঞ্জন।
পরিচালকের আত্মোপলব্ধিতে পরিবেশ বুঝি সামান্য ভারী! এ বার হাল ধরলেন অপর্ণা। বললেন, “আমার একটা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিই, আমি ভীষণ স্পষ্টবাদী। পর্দার জয়া ততটাই মিষ্টি। বাস্তবে এ রকম কোনও দিন হতে পারব না। তাই ‘জয়া’ আমার অপূর্ণ সাধ পূরণ করেছে।” একই ভাবে, ক্যানসারে কেমো নেওয়ায় চুল পড়ে গিয়েছে। মুখে চোখে অসুস্থতার ছাপ। সব মিলিয়ে পর্দায় তাঁকে মোটেও সুন্দর দেখাবে না! পরিচালক এ কথা জানাতেই নাকি, প্রথমে মুষড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী! হাসতে হাসতে যুক্তি দিলেন, “অনেক বাণিজ্যিক ছবি করার ফল বলতে পারেন। পর্দায় নায়িকাকে সুন্দর দেখাতেই হবে। সেটা নয় শুনে মনটা খারাপ হয়েছিল। পরে পরিচালকের যুক্তি মেনে নিই।”