মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শিখ পুলিশ অফিসারের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। ওই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও। মঙ্গলবার ঘটনার অব্যবহিত পরেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে ওই বিষয়ে আরও একবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার দেশপ্রিয় পার্কের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘এক জন শিখ অফিসার। তিনি পাগড়ি পরেন। পাগড়ি পরলেই তিনি খলিস্তানি? কত অফিসার তো মুসলিম রয়েছেন। মুসলিম মানেই পাকিস্তানি?’’ পাশাপাশিই মমতা নিজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমাকেও তো কত কী বলে ব্যঙ্গ করেছে! আমি কান দিই না। কিন্তু এগুলো কী ধরনের কথা!’’
এর পরেই মমতা নাম না করে শুভেন্দুদের নিশানা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দু-এক জন হঠাৎ গজিয়ে উঠেছে। তারাই বাংলার সবচেয়ে বড় কলঙ্ক! বাংলার সংস্কৃতিকে এরা ছিন্নভিন্ন করতে চায়। আমাদের শপথ হোক, বাংলার সংস্কৃতিকে আমরা কখনওই ছিন্নভিন্ন করতে দেব না।’’ মমতার কথায়, ‘‘বাংলা সংস্কৃতির বটবৃক্ষ। ছায়া, বিশ্বাস, ভরসা জোগায়। একটা শক্তি সেটাকে ভেঙে সব চাপিয়ে দিতে চাইছে! এই চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেই বাংলার লড়াই।’’
মঙ্গলবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ধামাখালিতে আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রার বাদানুবাদের ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে ওই অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি পাগড়ি পরে আছি বলে আমি খলিস্তানি? আপনি আমায় খলিস্তানি বলছেন? আমি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তার পরেই অগ্নিমিত্রা এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন, ‘‘কেউ কাউকে খলিস্তানি বলেনি!’’ তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। সেটিই রিপোস্ট করে অগ্নিমিত্রা লিখেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে ভিডিয়ো প্রকাশ করুক তৃণমূল। পুলিশ তৃণমূলের ছদ্মবেশে সন্দেশখালিতে কাজ করছে।’’
অগ্নিমিত্রার পোস্টটিকে রিপোস্ট করে আবার পাল্টা একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনে তৃণমূল। শাসকদলের আইটি সেলের অন্যতম অদিতি গায়েন একটি চ্যানেলের ফুটেজ পোস্ট করেন। সেখানে একটি পুরুষকণ্ঠকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা হচ্ছে খলিস্তানি।’’ সেই ফুটেজে শুভেন্দুকেও দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, ওই পুরুষকণ্ঠটি শুভেন্দুরই। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকারও দাবি করেছিলেন, বিরোধী দলনেতাই ‘খলিস্তানি’ শব্দটি বলেছিলেন। আইনানুগ ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সুপ্রতিম। পাল্টা শুভেন্দু কলকাতা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক বৈঠক থেকে সুপ্রতিমের উদ্দেশে বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রমাণ না করা যায় যে, ওই কথা তিনি বলেছেন, তা হলে তিনিই উল্টে আইনের দ্বারস্থ হবেন।
মঙ্গলবার থেকেই খলিস্তানি বিতর্ক রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতার শিখেরা বিজেপি দফতরের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতাদের ক্ষমা চাইতে হবে। অনেকের মতে, গোটা ঘটনায় চাপে পদ্মশিবির। সেই প্রেক্ষাপটে ফের সরব হলেন মমতা।