বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাপ্রসন্ন। ছবি: ফেসবুক।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় নাম ছিল না শিল্পী শুভাপ্রসন্নের। তবু দেশপ্রিয় পার্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে তিনি এলেন। মঞ্চে রইলেন। অতি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও করলেন। কিন্তু গত বারের ঘটনাবলি থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এ বার আর বিতর্কে জড়ালেন না। অর্থাৎ, গত বারের বিতর্কের পানি (জল) আর এ বারে গড়াতে দিলেন না।
গত বার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চে বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেছিলেন, ‘‘বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে নানা সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে।’’ এর পরেই তিনি সটান বলে বসেছিলেন, ‘‘যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ এখন বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় ‘পানি’ ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও ‘দাওয়াত’ দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা!’’
শুভাপ্রসন্নের পর ওই মঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠে শুভাপ্রসন্নের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন স্বয়ং মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁরা অতিথিসেবাকে দাওয়াত বলেন। এটা বাংলাদেশের ভাষা। যাঁরা ও পার থেকে এ দেশে এসেছেন, তাঁরা এই ভাষাটাকে গ্রহণ করেছেন। আমি মাতৃভাষাকে চেঞ্জ (বদল) করতে পারি না। যে যেটা শিখে এসেছে, সেটা চেঞ্জ করবে কী করে!’’ মমতা বলতে চেয়েছিলেন, বাঙালি মুসলিমরা জলকে ‘পানি’ বলেন। অতিথিসেবাকে বলেন ‘দাওয়াত’।
এ বার অতিথি তালিকায় শুভাপ্রসন্নের নাম না থাকায় অনেকে ভেবেছিলেন গত বারের ‘পানি’ গড়ানোর কারণেই এ বার তাঁর নাম ছাপা হয়নি। যদিও বাস্তবে দেখা গেল, ‘পানি’ গড়ায়নি। শুভাপ্রসন্নও নতুন কোনও বিতর্ক তৈরি হতে দেননি। মুখ্যমন্ত্রীকেও দেখা গেল শুভাপ্রসন্নের বলার সময়ে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তে।
বুধবার শুভাপ্রসন্ন তা হলে কী বলেছেন? বলেছেন, ‘‘এক অস্থির সময়ে (২০০৯ সাল) দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে স্মারক নির্মিত হয়েছিল। সেই সময়ে শোভন (চট্টোপাধ্যায়), দেবাশিস কুমারেরা অনেক বাধাবিপত্তি কাটিয়ে এই শহিদস্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণে ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’ বস্তুত, দেশপ্রিয় পার্কের স্মৃতিস্তম্ভের নকশাও শুভাপ্রসন্নেরই। তা নির্মিত হয়েছিল মমতার সাংসদ তহবিলের অর্থে।