Khalistani Row

পদ্মের ‘খলিস্তানি’ অস্বস্তি বহাল, রাতভর ধর্না রাজ্য দফতরে, শুভেন্দুকে ফোন ‘শিখ’ কেন্দ্রীয় নেতার

বিজেপির সন্দেশখালি আন্দোলন কি চাপা দিয়ে দেবে ‘খালিস্তানি’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক? এমন চিন্তা দলের অন্দরে। একই সঙ্গে রয়েছে অস্বস্তি। মোকাবিলায় সক্রিয় হয়ে ময়দানে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৪
Share:

শুভেন্দু অধিকারী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সন্দেশখালির ‘উত্তাপ’ এখন রাজ্য বিজেপির দফতরের সামনেও। ধামাখালিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে পুলিশের বচসার মধ্যে শিখ পুলিশ আধিকারিককে ‘খলিস্তানি’ বলা নিয়ে বিতর্কের জেরে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই পদ্মশিবিরের রাজ্য দফতরের সামনে ধর্নায় বসেন শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। রাতভর চলেছে সেই বিক্ষোভ। বুধবার সকালেও একই ছবি উত্তর কলকাতার ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে। এই পরিস্থিতিতে ‘অস্বস্তিতে’ রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

মঙ্গলবার রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে বিধানসভা থেকে শংসাপত্র পেয়েছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। এর পরে রাজ্য দফতরে ছিল তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানও স্বস্তির হয়নি। কারণ, সেই সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে স্লোগানে সরগরম ছিল উত্তর কলকাতার মুরলীধর সেন লেন। সংবর্ধনার আগে রাজ্যের প্রধান মুখপাত্র হিসাবে শমীককে ‘খলিস্তান’ বিতর্কের জবাবও দিতে হয়েছে। গোটা বিষয়টা তৃণমূলের ‘চক্রান্ত’ বলে ব্যাখ্যা করেন শমীক। শুভেন্দু তো বটেই, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল-সহ দলের অন্যান্য নেতাও একই কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে ‘অস্বস্তি’ কাটেনি।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতেই বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা ফোন করেন শুভেন্দুকে। ঘটনার পূর্ণ বিবরণ শোনেন বিরোধী দলনেতার কাছ থেকে। বিজেপির সর্বভারতীয় কমিটিতে দু’জন শিখ সম্পাদক রয়েছেন। মনজিন্দর ছাড়াও রয়েছেন নরেন্দ্র সিংহ। শুধু রাজ্য বিজেপি নয়, জাতীয় স্তরেও যে বিজেপি অস্বস্তিতে তার প্রমাণ মিলেছে শুভেন্দুকে মনজিন্দরের ফোন করায়। আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে মনজিন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারেননি। পরে তাঁর বক্তব্য পাওয়া গেলে তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।

Advertisement

শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শিখ-বিক্ষোভ চলছে। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ তথা শিখ বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিও জানিয়েছেন, তিনি রাজ্য, দেশ এবং বিদেশ থেকে অনেক ফোন পাচ্ছেন। তিনি এ নিয়ে তদন্তেরও আর্জি জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরেই দিল্লির সদর দফতরে জরুরি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে বলতে শুরু করলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েন। ‘খলিস্তান’ মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যিনিই বলে থাকুন, অন্যায় করেছেন। তবে রাজ্য বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে যে, দলের নেতারা কেউ ওই মন্তব্য করেননি।’’

ওই প্রসঙ্গে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকেও আক্রমণ করেছেন রবিশঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘‘শাহজাহান শেখকে কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না? প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। যা যা প্রকাশ্যে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে, সন্দেশখালিতে দিনের পর দিন যা হয়েছে, সেটা কোনও সভ্য সমাজে হতে পারে না।’’ একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কেন সমর্থন করছেন শাহজাহানকে? কী লুকোতে চাইছেন মমতা? রাজনৈতিক স্বার্থে মহিলাদের ইজ্জতকে প্রশ্নের মুখে কেন ফেলে দিয়েছেন?’’

বাংলা এবং দিল্লির নেতারা ‘সক্রিয়’ হয়ে ‘খলিস্তানি’ বিতর্কের মোকাবিলা করতে নামলেও দলের ভিতরে অন্য প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, নতুন এই বিতর্ক সন্দেশখালি নিয়ে যে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে তা নষ্ট করে দিতে পারে। বিজেপির যা পরিকল্পনা, তার অন্যতম হল ‘খলিস্তানি’ বিতর্ক চাপা দিতে খুব তাড়াতাড়ি সন্দেশখালি নিয়ে আরও বড় মাপের আন্দোলন তৈরি করা। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement