সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের মামলা সিআইডির হাতে দেওয়া হয়েছে। তারাই এই সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করতে চলেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শাহজাহানকে গ্রেফতার করে বসিরহাট থেকে বৃহস্পতিবার নিয়ে যাওয়া হয় ভবানী ভবনে। আগামী ১০ দিন তিনি সেখানেই থাকবেন। আদালত তাঁকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের গোয়ান্দারা শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে বসিরহাট আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহানের গ্রেফতারির বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার রাতে সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা একটি বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই গ্রেফতারি এবং তৎপরবর্তী কার্যপ্রণালী স্থির করা হয়। তার পর রাতে শাহজাহানকে ধরে পুলিশ।
রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার মিনাখাঁ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, শাহজাহানের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯-সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু শাহজাহান কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, তা তদন্তের স্বার্থে গোপন রেখেছেন এডিজি।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। সেখান থেকে ইডি আধিকারিকদের মার খেয়ে ফিরতে হয়েছিল। শাহজাহানের দেখা তাঁরা পাননি। তার পর থেকেই শাহজাহানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে সেই বিক্ষোভের আঁচ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতি দিনই অশান্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। মহিলারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ, গ্রামে শাহজাহান অত্যাচার চালান। জমি জবরদখলের অভিযোগও করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
৫৫ দিন ধরে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। না হলে রাজ্য সরকারের পুলিশই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, “শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ এর পর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, শাহজাহানকে গ্রেফতার করার বিষয়ে আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তাঁকে পুলিশ, ইডি বা সিবিআই যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে। তার পরেই বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশ মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করল শাহজাহানকে।