অতন্দ্র: কড়া পুলিশি নিরাপত্তা শিয়ালদহ আদালতের বাইরে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের মামলার শুনানি চলাকালীন আগেও আদালতের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। ফলে, শনিবারও তেমন কিছু হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিলই। তাই বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের আগাম ব্যবস্থা হিসাবে এ দিন নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল শিয়ালদহ আদালত চত্বর। যে গেট দিয়ে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে শিয়ালদহ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তার সামনের রাস্তায় ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হয়েছিল। ওই গেটের কাছে যে গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা, সেখানে এ দিন কোনও গাড়িই দাঁড়াতে পারেনি।
এ দিন দুপুরে শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে আর জি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এ দিন ভিতরে যখন মামলার রায় ঘোষণা চলছিল, বাইরে তখন জনতা ও বিক্ষোভকারীদের ভিড়। তাঁদের আটকাতে ছিল পুলিশের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা।
গার্ডরেল বসিয়ে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয় গোটা চত্বর। আদালতের একেবারে গেটের কাছে উপ-নগরপাল ছিলেন। তার পরেই থানা স্তরের অফিসারেরা। তারও পরে পথচলতি মানুষকে সরানোর দায়িত্বে নিচুতলার অফিসারেরা। আরও একটি গেটেও ছিল পুলিশি প্রহরা। তার মধ্যেই আদালত চত্বরের সামনে ভিড় জমান পথচলতি মানুষ। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘কড়া শাস্তির পাশাপাশি এই মামলায় স্বচ্ছতাও চাই।’’
গত কালই লালবাজার জানিয়েছিল, আদালত চত্বরে কোনও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। তবে, এ দিন সকাল থেকে সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিভিন্ন সংগঠন। বেলা ১২টা ৫৭ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় শিয়ালদহ আদালতে নিয়ে আসা হয় সঞ্জয়কে। স্লোগান ওঠে, ‘‘সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাই।’’ সব দিক ঢাকা প্রিজ়ন ভ্যানে করে এসে সঞ্জয় সেখানে নামে। সঙ্গে ছিল দু’টি সাদা গাড়ি। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের ভিতরে। যখন শুনানি চলছিল, বাইরে তখন স্লোগান ওঠে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আদালত চত্বরের বাইরে বছর ষাটের কিষাণ শর্মা বলে ওঠেন, ‘‘আজব তদন্ত! আমরা জানি, আরও অনেকে এই ঘটনায় জড়িত। কিন্তু তাদের সামনে আনা হচ্ছে না।’’
এ দিন আদালতের ভিতরে সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল তুলনায় কম। তবে, প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসের বাইরে ছিল ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা। আদালতে এ দিন আইনজীবী, কোর্টের কর্মীদেরও নজর ছিল এই মামলায়। শিয়ালদহ আদালতের আইনজীবী সপ্তর্ষি ঘোষ বলেন, ‘‘আজ অন্য কোনও মামলা নিয়ে কারও আগ্রহ ছিল না।’’ শিয়ালদহ কোর্টের আরও এক আইনজীবী শেখ আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘এত বছর ধরে এই কোর্টে মামলা লড়ছি, কিন্তু এত পুলিশ কখনও দেখিনি।’’
এ দিন সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। সোমবার হবে তার সাজা ঘোষণা। বিকেল ৩টে ৬ মিনিটে সঞ্জয়কে আদালত থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। অসীম মিদ্যা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘এই রায়ে আমরা খুশি। কিন্তু একা কারও পক্ষে এই অপরাধ ঘটানো সম্ভব নয়।’’ আদালতের সামনে হাজির অমিতাভ দাসের কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের তো এখানে কোনও ভূমিকাই নেই। কলকাতা পুলিশ যা করেছে, সিবিআই তা-ই করল।’’
আদালত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করার পরে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ দেখানো এক সংগঠনের তরফে রসগোল্লা বিলি করা হয়। ওই সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাই। ফাঁসি না হলে এই বিক্ষোভ আরও জোরদার হবে।’’