বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
রাজ্যে এ বার সিবিআই থানার প্রয়োজন রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মহিলা ঋণদান সমিতির দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন এমনটাই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি চলাকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, রাজ্য জুড়ে নতুন নতুন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। রাজ্যের বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগ উঠছে। পুলিশ এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়ে হয়রান হচ্ছে মানুষ। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। আর সেই কারণেই রাজ্যে অন্তত তিন-চারটি সিবিআই থানা গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। ইন্সপেক্টর-কনস্টেবল সবাইকে নিয়ে সেই থানা তৈরি সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গ মহিলা ঋণদান সমিতির দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সিবিআইয়ের উপর মামলার চাপ তৈরি হওয়ায় রাজ্যের ১০ জন পুলিশ অফিসারকে ডেপুটেশনে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছিল, ওই মামলার তদন্তকারীদের উত্তরবঙ্গে থাকা এবং যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্যকে। তদন্তের স্বার্থে ওই মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল নির্দেশনামা মুখ্যসচিবের অফিসে পাঠিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিবের তরফে এজলাসে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই রাজ্যে সিবিআইয়ের থানার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
উল্লেখযোগ্য যে, প্রথমে ৩ নভেম্বর এবং পরে ৭ ডিসেম্বর ১০ জন পুলিশ অফিসারকে ডেপুটেশনে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু গত সোমবার অর্থাৎ, ১৮ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের তরফে অভিযোগ করা হয়, এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি রাজ্যের তরফ থেকে। এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকেল ৩টের মধ্যে বিষয়টি হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলাকারীর আইনজীবীকে ১ ঘণ্টার মধ্যে হাই কোর্টের নির্দেশ রাজ্যের জিপি-কে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে ২১ হাজার ১৬৩ জন মোট ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে আবেদনকারী পক্ষের অভিযোগ ছিল হাই কোর্টে। টাকা জমা দেওয়ার সময় সমিতি জানিয়েছিল, ওই টাকা বাজারে ঋণ হিসাবে খাটানো হবে। কিন্তু পরে টাকা ফেরত পাওয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন, সমিতিই ‘বিলুপ্ত’ হয়ে গিয়েছে। তিন বছর ধরে তদন্ত করার পরেও সিআইডিও খুঁজে বার করতে পারেনি কাদের ওই টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয় সমিতির পাঁচ কর্তাকে। মামলাকারী আদালতে অভিযোগ করেন, ঋণ যদি দেওয়া হত, তাহলে গ্রহীতাদের নাম থাকত। কিন্তু সিআইডি গত তিন বছরে কারও নাম খুঁজে পায়নি। গত অগস্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাই মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।