গত ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ। ফাইল চিত্র।
ধর্মতলা চত্বরে রাস্তা বন্ধ করে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় নওশাদ সিদ্দিকি-সহ ৬৫ জনের ভূমিকা প্রমাণ করা যাবে তো? ওই দিনের ঘটনাতে যে এঁরা সকলে যুক্ত রয়েছেন, তা-ই বা কী করে জানা গেল? নওশাদ মামলায় রাজ্যকে প্রশ্ন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।
গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি ঘিরে বিক্ষোভের জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে আইএসএফ কর্মীদের। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ-সহ বহু সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৬৫ জন আদালতে মামলা করে দাবি করেছেন যে, তাঁদের জোর করে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সেই মামলারই শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ সাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে।
মামলার শুনানি চলাকালীন নওশাদের আইনজীবীকে বিচারপতি বসাক প্রশ্ন করেন, ‘‘রাজ্য যদি দেখায় যে নওশাদের করা উস্কানিমূলক বক্তব্যের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে তা হলে কী হবে?’’ উত্তরে নওশাদের আইনজীবী বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও প্রমাণ পুলিশ দেখাতে পারবে না। আমি বলেছি এই প্রশাসনের ওপর আমাদের কোনও ভরসা নেই। নওশাদ পুলিশকে মারতে বলেছে এই ধরনের কোনও প্রমাণও নেই।’’
কিন্তু আত্মরক্ষার নাম করে পুলিশকর্মীদের ওপর আক্রমণকেও কি আত্মরক্ষা বলা যায়? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তবে নওশাদের আইনজীবীর দাবি, এই ধরনের কোনও আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের কর্মীরা একাধিক জায়গায় আইএসএফ কর্মীদের আটকেছিল ওই দিন। অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই নিয়ে ল্যাপটপে নওশাদের ভাষণও শোনেন বিচারপতি বসাক। আর তার পরই রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘পুলিশকে মারতে বলা হচ্ছে সেই প্রমাণ কোথায়?’’এর পর রাজ্যের আইনজীবীরা জানান তাঁদের কাছে সাক্ষী আছে। এর পর আবার বিচারপতি বসাকের প্রশ্ন, ‘‘কে সাক্ষী? একজন হকার? তিনি কী করে জানলেন? কোনও ভিডিও এখন অবধি নেই তো?’’
পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীকে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনায় ৬৫ জন মামলাকারী রয়েছেন। ওই দিনের ঘটনায় প্রত্যেকের ভূমিকা প্রমাণ করতে পারবেন তো? সবাই গন্ডগোলের সঙ্গে যুক্ত আছে জানলেন কি করে?’’
বিচারপতি বসাকের পর্যবেক্ষণ, ঘটনার দিন কোনও ব্যক্তি হয়তো পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আর সেই সময়ই হয়তো গন্ডগোল শুরু হয়েছে। তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হয়তো তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তা হলে এই গন্ডগোলে তাঁদের কী ভূমিকা থাকতে পারে?
রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবীর দাবি, নওশাদই পুলিশকে আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, সংগ্রহ করা ভিডিয়ো ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভার সিসিটিভি ফুটেজও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলেও রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়।বৃহস্পতিবার আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।