Bengal Ration Distribution Case

রেশন দুর্নীতি মামলায় পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ, রাজ্যের কাছে কেস ডায়েরি তলব করল হাই কোর্ট

আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০১৯ সালে বালিগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে রেশন দুর্নীতি মামলা শুরু হয়েছিল। এখনও যদি পুলিশ সেই মামলার তদন্ত চালিয়ে যায়, তা হলে তা বন্ধ রাখতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৩
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রেশন দুর্নীতি মামলায় পুলিশি তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানান, রেশন দুর্নীতি মামলায় যদি এখনও পুলিশি তদন্ত চলে, তা হলে তা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি, এই সংক্রান্ত নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়াও চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে আদালত। সোমবার উচ্চ আদালতে রেশন দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে। শুনানি চলাকালীন আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত রেশন দুর্নীতির মামলাগুলির উপর পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। পাশাপাশি, এই মামলায় রাজ্যের কাছে কেস ডায়েরিও তলব করেছে আদালত।

Advertisement

আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০১৯ সালে বালিগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা শুরু হয়েছিল। তবে এখনও যদি পুলিশ সেই মামলার তদন্ত চালিয়ে যায়, তা হলে আপাতত তা বন্ধ রাখতে হবে বলেই জানিয়ে দিল বিচারপতি সেনগুপ্তের বেঞ্চ।

উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে রেশন দুর্নীতির এই ছ’টি মামলার তদন্তে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল, তদন্তে নেমে তারা জানতে পেরেছে, রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত ছ’টি এফআইআর রাজ্যের পুলিশের তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও পুলিশ অপরাধীদের ধরা তো দূর, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি। উপরন্তু, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও তদন্ত বন্ধ করে রেখেছে। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে এই মর্মে আর্জি জানিয়েছিল ইডি। হাই কোর্টের কাছে তাদের অনুরোধ, রেশন সংক্রান্ত যে সমস্ত মামলা রাজ্য পুলিশের তদন্তাধীন ছিল, তা যেন সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

বাংলায় রেশন সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তারা গ্রেফতার করেছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যবসায়ী তথা চাল-গমের মিল মালিক বাকিবুর রহমান এবং বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকেও। রেশনকাণ্ডে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকেও খুঁজছে ইডি। অথচ রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত ছ’টি এফআইআর ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া সত্ত্বেও তারা এ ব্যাপারে কোনও রকম পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি করেছে ইডি। হাই কোর্টকে ইডি বলেছিল, ‘‘রাজ্যের তরফে রেশন দুর্নীতির তদন্ত এগিয়েছে একতরফা ভাবে। কারণ, রেশন বণ্টন এবং ধান কেনার ক্ষেত্রে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মন্ত্রী জড়িত ছিলেন। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। উপযুক্ত নথি ও তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল তদন্ত।’’

শুধু তা-ই নয়, রেশন সংক্রান্ত মামলাগুলির ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে উত্তর চেয়েও পাওয়া যায়নি বলেও হাই কোর্টকে জানিয়েছিল ইডি। রেশন দুর্নীতি মামলায় যে ছ’টি এফআইআর দায়ের হয়েছিল, সেগুলির ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছিল ইডি। শুক্রবার হাই কোর্টকে তারা জানিয়েছিল, মামলাগুলির অগ্রগতি কেমন, তা জানতে চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়েছিল তারা। একই সঙ্গে এই মামলায় যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও চিঠি দেওয়া হয়েছিল ডিজিপিকে। কিন্তু কোনও প্রশ্নেরই জবাব আসেনি। হাই কোর্টে তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতির তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্যের পুলিশ। আর সেই যুক্তিতেই রেশন দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য পুলিশের সমস্ত মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল তারা। সেই মামলাগুলিতেই এ বার পুলিশি তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement