দাবানলের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে চিলির একাংশ। পুড়ে ছাই হয়েছে বহু বাড়ি, গাড়ি, দোকান। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দাবানলের আগুনে পুড়ে এখনও পর্যন্ত চিলির ১১২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্য চিলির পাহাড়ের জঙ্গল থেকে দাবানলের সূত্রপাত। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, সেই দাবানলে ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক। শনিবার বিকাল থেকেই হেলিকপ্টারে চেপে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনে বেরিয়েছেন তিনি।
২০১০ সালে চিলির ভূমিকম্প এবং সুনামির ঘটনায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর দাবানলের কারণে সৃষ্ট ওই অগ্নিকাণ্ডই সে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বোরিক।
পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে চিলি, পেরু, ইকুয়েডর বরাবর কোনও কোনও বছরের শেষ দিকে এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম ‘এল নিনো’।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সেই তাপপ্রবাহের কারণেই এই দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। চলতি বছরে লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলিতেও এর প্রভাব পড়েছে।
চিলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারোলিনা তোহার মতে, এই দাবানল চিলির ইতিহাসে ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’। রবিবারের মধ্যে মধ্য এবং দক্ষিণ চিলির প্রায় ৬৪ হাজার একর জমি পুড়ে গিয়েছে।
চিলির দাবানলের আগুনে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্রতীরবর্তী শহর ভিনা দেল মার শহর এবং এর আশপাশের এলাকা। ১৯৩১ সালে তৈরি শহরের একটি বিখ্যাত উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
ভিনা দেল মার শহরের প্রায় ১৬০০ মানুষ ঘরছাড়া। শহর জুড়ে এখন শুধু অসহয়তার ছবি। ঘরবাড়ি এবং স্বজন হারিয়ে হাহাকার করছেন বহু মানুষ।
টানা চার দিন ধরে চলা অগ্নিকাণ্ডে ভিনা দেল মার শহর কার্যত ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে। সাদা চাদরে মুড়ে রাখা মৃতদের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।
যখন ভিনা দেল মার শহরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন ঘরের বাইরে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রোজানা অ্যাভেন্ডানো। পেশায় রাঁধুনি ৬৩ বছর বয়সি সেই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার সময় তিনি বাড়ি থেকে দূরে ছিলেন। বাড়িতে একা ছিলেন তাঁর স্বামী।
বহু ঘণ্টার চেষ্টায় স্বামীর সঙ্গে মিলন হলেও তাঁর বাড়িঘর পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রোজানার কথায়, ‘‘আগুন ছিল ভয়ানক। আমি বাড়ি ফিরতে পারিনি। আমার স্বামী বাড়িতে শুয়েছিলেন। আগুনের তাপ অনুভব করতে পেরে তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। আমরা সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি।’’ রোজানার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু মানুষের।
দাবানলের আগুনের তাপে মধ্য চিলির বেশ কয়েকটি অংশের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিলির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা দিনরাত এক করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩১টি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার নিয়ে লড়াই করে চলেছেন দমকল বিভাগের প্রায় ১৪০০ কর্মী এবং ১৩০০ সেনা। চলছে মৃতদেহ উদ্ধারও।
রবিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গিয়েছিল। যার মধ্যে ৩২ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিলির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান আলভারো হরমাজাবল জানিয়েছেন, রবিবার সকাল পর্যন্ত ৩৪টি জায়গায় আগুন জ্বলছিল। অন্য ৪৩টি জায়গায় আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবহাওয়ার কারণেই আগুন নেভাতে দেরি হচ্ছে বলে হরমাজাবাল জানিয়েছেন।
চিলিতে দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার। শুক্রবার সরকারের তরফে ভালপারাইসো এবং রাজধানী সান্তিয়াগোর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবারের মধ্যে আগুন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষকে তাঁদের বাড়িঘর খালি করার নির্দেশ দেয় সরকার।
সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে দেশের সরকার। চিলির বিপদে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিবেশী আর্জেন্টিনাও।