CBI

CBI: সাড়ে সাত মাসে সাত সিবিআই, আদালতের নির্দেশে বারংবার কেন্দ্রীয় তদন্তের মুখে বাংলা

প্রথমটি ২২ নভেম্বর। গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। যদিও পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেখানে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ খারিজ হয়ে গেলেও কমিটি গঠন করে তদন্তের কথা বলে আদালত। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ২০:০৪
Share:

সাড়ে সাত মাসে সাত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ আদালতের।

ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার গেল সিবিআইয়ের হাতে। সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। দিন দশেক আগেই বগটুই গণহত্যার তদন্তের দায়িত্বও আদালতের নির্দেশে গিয়েছে কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার হাতে। গত সাড়ে সাত মাসের হিসাব বলছে, সাতটি অভিযোগের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

ছোট আঙারিয়া থেকে নন্দীগ্রাম, রাজ্যে অনেক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে সিবিআই। বাম আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক চুরির তদন্তভারও গিয়েছিল কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার হাতে। আবার তৃণমূলের শাসনকালেও সারদা থেকে নারদ-কাণ্ডের তদন্তে নেমেছে সিবিআই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে খুব কম সময়ের মধ্যে আটটি তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। সবক’টিই আদালতের নির্দেশে। এর মধ্যে দু’টি ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ে দিলেও বাকি পাঁচটি ক্ষেত্রে বহাল সিবিআই তদন্ত।

২০২১ সালের ২ মে রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। তার পর থেকেই বিরোধীরা রাজ্যে ভোট পরবর্তী খুন, ধর্ষণ, অত্যাচারের অভিযোগ তুলতে শুরু করে। একের পর এক মামলা হয় আদালতে। শেষে ১৯ অগস্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। সেই শুরু। ১৯ অগস্ট থেকে ৪ এপ্রিল। মোটামুটি সাড়ে সাত মাস সময়। এর মধ্যে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগেই তিনটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ শুনিয়েছে আদালত।

Advertisement

প্রথমটি ২২ নভেম্বর। গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। যদিও পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেখানে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ খারিজ হয়ে গেলেও কমিটি গঠন করে তদন্তের কথা বলে আদালত। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু হয়।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ পরে আরও একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি-র গ্রুপ সি পদে নিয়ম ভেঙে নিয়োগের মামলায়। তার আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘ভুয়ো’ ৩৫০ জন কর্মীর বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেয় ওই একক বেঞ্চ। ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।

ফেব্রুয়ারি মাসে আরও একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। হলদিয়া বন্দরে লরি থেকে তোলাবাজির অভিযোগের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ। নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। আবেদন ছিল, সিবিআইয়ের বদলে পুলিশকেই তদন্তের ভার দেওয়া হোক। কিন্তু ১৪ মার্চ সেই আর্জি নাকচ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

শিক্ষাক্ষেত্রে আরও একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট।

ফেব্রুয়ারিতে তিনটির পরে মার্চ ও এপ্রিল মাসে একটি করেসিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।রামপুরহাটের বগটুই-কাণ্ড নিয়ে প্রথম থেকেই সব বিরোধী দল সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিল। অন্য দিকে, রাজ্য পুলিশের উপরে ভরসা রেখেই সিট গঠন করে নবান্ন। তদন্তও শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে একাধিক মামলা চলে গিয়েছে আদালতে। ২৫ মার্চ আদালত সিবিআইকে তদন্ত শুরু করতে বলে। সেই তদন্ত শুরু হতে না হতেই রাজ্যে আরও একটি তদন্ত হাতে পেল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

গত ১৩ মার্চ বিকেলে পুরুলিয়ার ঝালদায় খুন হন তপন কান্দু। কংগ্রেসের ওই পুর-কাউন্সিলর খুনের পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সঙ্গে তপনের পরিবারও সিবিআই তদন্তের দাবি তোলে। পুলিশ তপনের ভাইপো দীপক কান্দুকে গ্রেফতার করে। এর পরে রাজ্য সরকার সিট গঠন করলে ওই হত্যায় জড়িত অভিযোগে, তপনের দাদা নরেন কান্দু ছাড়াও আশিক খান ও কলেবর সিংহ নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার হয়। কিন্তু তপনের পরিবারের অভিযোগ ছিল, খুনের ঘটনায় ঝালদা থানার তৎকালীন আইসি সঞ্জীব ঘোষও জড়িত। রবিবারই সঞ্জীবকে ক্লিনচিট দেয় পুরুলিয়া পুলিশ। আর সোমবার তদন্ত চলে গেল সিবিআইয়ের হাতে।

আদালতের নির্দেশে একের পর এক তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে চলে যাওয়া নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক চাপানউতরও তুঙ্গে। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পরে সেটা দলের রাজনৈতিক জয় বলেও দাবি করেছিল বঙ্গ বিজেপি। আর সাড়ে সাত মাসে সাত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ নিয়ে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রাজ্যের মানুষের পুলিশের উপরে আস্থা নেই। এটা বোঝা যাচ্ছে, আদালতেরও আস্থা নেই। আমার প্রশ্ন, সরকারটা আছে কী করতে?’’

অন্য দিকে, শাসক তৃণমূল সেভাবে গুরুত্বই দিতে চাইছে না। দলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন,‘‘আদালত যদি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় সেখানে কারও কিছু বলার থাকে না। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত সিবিআইকে খাঁচায় পোষা তোতাপাখির সঙ্গে তুলনা করেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সিবিআইকে নিরপেক্ষ হতে বলেছে। সংস্থার কার্যপদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। দেখা গিয়েছে, সিবিআইয়ের সাফল্যের হারও কম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement