প্রতীকী চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের নির্দেশই বহাল থাকল। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের কোনও ডিভিশন বেঞ্চেই ওই মামলার শুনানি হল না। ফলে অস্বস্তি বাড়ল শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগে রাজ্যের গঠিত উপদেষ্টা কমিটির চার সদস্যের। দিনভর ছোটাছুটি করেও তাঁরা কোনও ‘রক্ষাকবচ’ আদায় করতে পারলেন না। ফলে একক বেঞ্চের নির্দেশ মতো এখন তাঁদের সিবিআইয়ের কাছে হাজির হতে হবে।
তবে মঙ্গলবার অন্য ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য দিকে, কমিটির উপদেষ্টাকে ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া রক্ষাকবচের মেয়াদও সোমবার শেষ হচ্ছে। তাই সোমবার তিনি অনেক চেষ্টা করলেও ওই মেয়াদ আর বাড়াতে পারেননি।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি এবং পর্যবেক্ষণের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গড়েছিল রাজ্য। কমিটির উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা ছাড়াও ছিলেন সুকান্ত আচার্য (তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব), প্রবীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, (তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ওএসডি), অলোককুমার সরকার (শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর), তাপস পাঁজা (শিক্ষা দফতরের আইনি অফিসার)। হাই কোর্টের শুনানিতে স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ বার বার এই কমিটির দিকেই ওঠে।
গত শুক্রবার ওই কমিটির চার জনকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে বলেছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। বলা হয়, ওই চার জনকে জেরা করে কী জানা গেল সোমবার সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে সিবিআই। কিন্তু তাঁরা তদন্তের মুখোমুখি না হয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান। শুক্রবার শুনানি না হওয়ায় সোমবার একই দিনে সিঙ্গল এবং ডিভিশন উভয় বেঞ্চে ছিল শুনানি। তবে সমস্যা তৈরি হয় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ধার্য করা বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোয়। এর ফলে মামলাটি সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে শুনানি শুরু হলেও, ডিভিশন বেঞ্চে হয়নি।
শুক্রবারের নির্দেশ পালন না করার কারণে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর নির্দেশ, ওই চার জনকে এক ঘণ্টার মধ্যে সিবিআই অফিসে যেতে হবে। শান্তিপ্রসাদ-সহ কমিটির বাকি সদস্যদের পাঁচ আইনজীবী বিচারপতিকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। আদালত নির্দেশ দেয়, দুই অধিকারিককে সিবিআইয়ের কাছে যেতে হবে সোমবার দুপুর ২টোর মধ্যে। বাকি দু’জন যাবেন বিকেল ৩টের সময়। তাঁদের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত করবেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) এবং বিধাননগর কমিশনারেট। ফের এই নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়। মামলাটির দ্রুত শুনানির জন্য হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন কমিটির আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব মামলাটির শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু ওই বেঞ্চ জানায়, পূর্ব নির্ধারিত অন্য একটি মামলায় বেঞ্চ ব্যস্ত রয়েছে। তাই এখনই শুনানি করা সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় ফের প্রধান বিচারপতির কাছে যান পাঁচ জনের আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি মামলাটি বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে স্থানান্তরিত করেন। সেখানেও ধাক্কা খান তাঁরা। ওই ডিভিশন বেঞ্চও মামলাটি ফিরিয়ে দেয়। এ ভাবে হাই কোর্টের তিনটি ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি গেলেও শুনানি হয়নি। বার বার ফিরে আসতে হয়েছে। তত ক্ষণে একক বেঞ্চের নির্দেশের সময়সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। অবশেষে পথ খুঁজে না পেয়ে আবার প্রধান বিচারপতির কাছে যান ওই আইনজীবীরা। সব মিলিয়ে চার বার তাঁরা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন।
পুরো ঘটনাক্রম শুনে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালত একটা নির্দেশ দিয়েছে সেখানে অসুবিধা কোথায়? এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন?’’ শেষমেশ সোমবার আইনজীবীদের এত দৌড়াদৌড়ির পরও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে তাঁরাই মক্কেলদের পরামর্শ দেন সিবিআইয়ের কাছে যাওয়ার। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কমিটির চার সদস্যই হাজির হয়েছেন সিবিআইয়ের দফতর নিজাম প্যালেসে।
অন্য দিকে, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ উচ্চ আদালত জানায়, মঙ্গলবার মামলাটি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিভাষ পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চে উঠতে পারে। ফলে তা হবে এই মামলার পঞ্চম ডিভিশন বেঞ্চ। আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা হাই কোর্টে এমন ঘটনার উদাহরণ নেই!