অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা আটকাল না কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল ছবি।
শর্তসাপেক্ষে ধর্মতলার শহিদ মিনারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সভার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, একটি কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশ কী ভাবে অন্য কর্মসূচির অনুমতি দিল? মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়।
বিচারপতি অভিষেকের সভা আটকাননি। তবে একাধিক শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। সভা করার সময়ে সেই শর্তাবলি মেনে চলতে হবে তৃণমূলকে।
কী কী শর্ত নির্দিষ্ট করা হয়েছে অভিষেকের সভার জন্য? বিচারপতির নির্দেশ—
শুনানি চলাকালীন বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আদালত প্রত্যাশা করে তৃণমূল ছাত্র-যুবর তরফে কোনও রকম অশান্তিতে উস্কানি দেওয়া হবে না। যদি তা করা হয়, তা হলে তার ফল ভাল হবে না।’’
পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতি মান্থার বক্তব্য, ‘‘ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়, পুলিশ কমিশনারকে সে দিকে নজর রাখতে হবে। একই জায়গায় দু’টি কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া যাবে না। শহরে আরও অনেক জায়গা রয়েছে। সামলাতে পারলে রেড রোডে অনুমতি দিয়ে দিন। তাতে তো আরও প্রচার পাবে।’’
মামলকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সওয়াল, মহার্ঘ ভাতার দাবি নিয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ওই সভামঞ্চ থেকে ১২০ মিটার দূরে ধর্না দিচ্ছে। সভা শুরুর আগে আন্দোলনকারীরা বার বার হুমকির মুখে পড়ছেন। বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও এসেছে। হতে পারে আন্দোলনকারীদের তুলে দেওয়ার জন্যই ওই জায়গায় সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মোহনবাগান মাঠে এই সভা করা যেত।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করবে। বিচারপতি মান্থা রাজ্যের বক্তব্যের পর জানতে চান, শহরের অন্য কোথাও কি সভা করা যায় না? কেন একই স্থানে দু’টি কর্মসূচির অনুমতি দিয়ে সমস্যাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে?
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘পরিকল্পনামাফিক সভার জন্য ওই স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।’’ তিলজলার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই সওয়াল-জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জানায়, হিংসা বাংলায় নতুন নয়। তবে কিছু খারাপ ঘটনা ঘটেছে বলে আগে থেকে কেউ বলে দিতে পারে না ভবিষ্যতে কী হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক জমানাতেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। শুধু এখানে নয়, সব রাজ্যেই ঘটেছে। আদালতের উচিত পুলিশের উপর আস্থা রাখা। বিচারপতি মান্থা এর পর জানান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলেরই সভা বা মিছিল করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মামলাকারীদের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সব দিক বিবেচনা করেই তৃণমূলের সভায় অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি।