গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সন্দেশখালির ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সিটের মাথায় থাকবেন সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের এক জন করে এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। তবে ওই বিশেষ তদন্তকারী দলে বসিরহাট পুলিশ জেলার ন্যাজাট থানার কোনও পুলিশ আধিকারিক বা কর্মী থাকতে পারবেন না। বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তিনি জানান, এই পুরো তদন্তের উপর নজরদারি করবে আদালত।
সন্দেশখালিকাণ্ডে মোট তিনটি এফআইআর দায়ের হয়েছে ন্যাজাট থানায়। তার মধ্যে একটি এফআইআর করেছে ইডি। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা রুজু করে পুলিশ। তৃতীয় এফআইআর-টি করেন সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়ির কেয়ারটেকার। প্রথম দু’টি এফআইআরের তদন্ত করবে সিট। দলে সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবে বলে আদালতের নির্দেশ। রাজ্য জানিয়ে দিয়েছে, তাদের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দলে থাকবেন ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপার জসপ্রীত সিংহ। তবে সিবিআইয়ের তরফে এখনও কোনও আধিকারিকের নামের উল্লেখ করা হয়নি। আদালতের নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট সিট চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা রাজ্য পুলিশের সাহায্য নিতে পারবে।
বস্তুত, সন্দেশখালিতে আক্রান্ত হওয়ার পর ইডি আদালতে জানিয়ে দেয়, রাজ্য পুলিশের উপর তাদের ভরসা নেই। এমনকি, তথ্য বিকৃতিরও আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। ইডির আইনজীবীর আবেদন ছিল, সিবিআই কিংবা কোনও ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’ দিয়ে তদন্ত হোক। অন্য দিকে, রাজ্য জানায় পুলিশ নিজের কর্তব্য পালন করেছে। তারা নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করেছে এবং বেশ কয়েক জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত জানিয়ে দেয়, বিশেষ তদন্তকারী দলে সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের আধিকারিক থাকবেন। সন্দেশখালির ঘটনায় দু’টি এফআইআরের তদন্ত করবে ওই সিট। আগামিকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিটকে যাবতীয় নথি দিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। ওই দিন তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হবে সিট-কে।
সন্দেশখালি মামলায় ইডির হয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) এসভি রাজু এবং আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী সওয়াল করেন। রাজ্যের তরফে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত এবং আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের হয়ে আদালতে ছিলেন কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য।
সন্দেশখালিকাণ্ডে এর আগে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়ির আশপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ‘পলাতক’ তৃণমূল নেতার বাড়িতে কাদের যাতায়াত রয়েছে, সেই নজরদারির জন্যই নির্দেশ। বুধবার রাজ্য জানায় আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ১০টি সিসি ক্যামেরা ‘ইনস্টল’ করা হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহানের নামাঙ্কিত বাজারেও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। যদিও রাজ্য এবং ইডি পরস্পরের বিরুদ্ধে সেখানে অভিযোগ করে। সিবিআই বলে, ওসামা বিন লাদেনের মতো ভয়েস মেসেজ করছেন শাহজাহান। তার পরেও পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না। ইডি তাতে সায় দিয়ে বলে, ‘আমি সুভাষ বলছি....’-র মতো বার্তা পাঠাচ্ছেন শাহজাহান। পুলিশ এত দিন কী করছে! এই সওয়াল জবাব শেষ হলে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।