সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানকে ধরতে গিয়ে আক্রান্ত হয় ইডি। ভাঙচুর চলে গাড়িতে। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর সন্দেশখালি মামলায় নির্দেশ মুলতুবি রাখল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, বিস্তারিত শুনানি হয়েছে। বুধবার এই মামলায় চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়ির সামনে পুলিশকে দ্রুত সিসিটিভি ক্যামেরা ‘ইনস্টল’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালিকাণ্ডে দায়ের হওয়া আরও একটি এফআইআরের কেস ডায়েরিও তলব করেছে আদালত। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, দুপুরে দায়ের হওয়া এফআইআরের কপিও আনতে হবে রাজ্যকে।
সন্দেশখালি মামলায় ইডির হয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) এসভি রাজু এবং আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী সওয়াল করেন। রাজ্যের তরফে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত এবং আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সওয়াল পর্বে বিচারপতি বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় পুলিশের অন্তত ৩০৭ ধারা যুক্ত করা উচিত ছিল। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে। আদালত কি পুলিশকে বলে দেবে কী ভাবে তদন্ত করতে হবে?’’ এই প্রেক্ষিতে রাজ্য বলে, ইডির অভিযোগ দায়ের করার পরে পদক্ষেপ শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শাহজাহানের বাড়িতে যায় পুলিশ। তখন বিচারপতি বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) আপনি বললেন যে, ঘটনার দিন রাতে পুলিশ শাহজাহানের বাড়িতে যায়নি। পরের দিন গিয়েছিল?’’ রাজ্য তখন জানায়, তখন কেস ডায়েরি ছাড়াই তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এ বার তথ্য দেখে বলা হচ্ছে। যা নিয়ে ইডির আইনজীবী অভিযোগ করেন, রাজ্য বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছে।
রাজ্য আদালতে জানিয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি রাত রাত ১২টা ৫৮ মিনিট নাগাদ বাহিনী নিয়ে পুলিশ শাহজাহানের বাড়িতে যায়। বিচারপতি তখন রাজ্য প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা তখন বাড়ি সিল করেছিলেন? যে তালা দেওয়া ছিল তা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিলেন? পাড়ার কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন? যদি না করে থাকেন, তবে বলতে হবে এটাই তো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা!’’ রাজ্যের তরফে জবাবে জানানো হয় শাহজাহানের বাড়ি সিল করা হয়নি। তালা ভেঙে বাড়িতেও ঢোকেনি পুলিশ। কিন্তু ওই দিন থেকে বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। নজরদারি করা হচ্ছে। বিচারপতি এর পর প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কি সঠিক ভাবে তদন্ত করতে ইচ্ছুক? আদালত কি আপনাদের সেই সময় দেবে? আদালতের আস্থা রাখতে পারবেন?’’
ইডি অভিযোগ করেছে, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করতে পারবে না। সিবিআই বা অন্য কোনও ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’কে তদন্তভার দেওয়া হোক। যার বিরোধিতা করে রাজ্যের তরফে বলা হয়, ‘‘এখানে পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করা হচ্ছে? এখানে পুলিশ কী দোষ করল? একটি ঘটনা ঘটেছে। এফআইআর দায়ের হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। এই অবস্থায় কেন অন্য সংস্থাকে তদন্তভার দেওয়া হবে?’’ যুক্তিতে রাজ্য এ-ও বলে, ‘‘যদি হাই কোর্টের সামনে আইনজীবীরা বিক্ষোভ দেখান, অশান্তি হয়, তার জন্য কি পুলিশ দায়ী থাকবে? পুলিশ তো ওই ঘটনার তদন্ত করবে। ওই ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ কাজ করেছে।’’ পাল্টা ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘এত বড় ঘটনা ঘটল আর পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। যখন আমাদের অফিসারেরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান, রাস্তায় ব্রেকফাস্ট করার সময় পুলিশ পৌঁছয়। এটাকে কি উদ্ধার করা বলে?’’ রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, এটা দেখতে চাই। পুলিশ যদি তা করতে পারে তদন্তভার তাদের হাতে থাকা নিয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।’’ অন্য দিকে, আবারও ইডি দাবি করে, পুলিশ তদন্ত করলে তথ্য এবং নথি বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলে, ‘‘শাহজাহান ওকালতনামা দাখিল করল। কিন্তু পুলিশ ধরতে পারল না।’’
দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে নির্দেশ মুলতুবি রেখেছে আদালত। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে।