(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’দের নিয়ে আবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে নতুন করে আবেদন করতে হবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। যদি রাজভবন অনুমতি দেয়, তবে সেখানে যেতে পারবেন শুভেন্দুরা। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, রাজভবনে কত জন লোক যাবেন, কতগুলি গাড়ি থাকবে, সেই সংখ্যা জানাতে হবে পুলিশকে।
বৃহস্পতিবার ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত প্রায় ২০০ জনকে নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানে তাঁদের পুলিশ ঢুকতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা। শুক্রবার তাঁর আইনজীবী হাই কোর্টে সওয়াল করেন, রাজভবনের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বাধা দিয়েছে পুলিশ। অথচ যে জায়গায় শুভেন্দুদের আটকানো হয়েছে, সেখানে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কর্মসূচি করেছে গত বছরের অক্টোবরে। শুভেন্দুদের কেন বাধা দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল কি হাউস অ্যারেস্ট (গৃহবন্দি) হয়েছেন? তা হলে কেন রাজ্যপালের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি? কেন বাধা দিয়েছিল পুলিশ?’’ বিচারপতি জানিয়েছেন, পুলিশের বাধা দেওয়া নিয়ে হলফনামা জমা দেবেন শুভেন্দু। পাল্টা হলফনামা দেবে রাজ্য। আগামী ছ’সপ্তাহ পরে এই মামলার শুনানি।
রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের সওয়াল, বিষয়টি যে ভাবে আদালতে বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। আদালতে তাঁর দাবি, শুভেন্দুর গাড়ি রাজভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বিরোধী দলনেতার আপ্তসহায়ক (পিএ) গাড়ি থেকে নেমে এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কাছে পুলিশের তরফে জানতে চাওয়া হয়, কত জন লোক, কত গাড়ি যাবে? তিনি গাড়ির কাছে ফিরে গিয়ে ওই তথ্য নিয়ে আর পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেননি বলে এজি আদালতে দাবি করেন। পরে শুভেন্দু এসে ওই জায়গাতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন বলে এজির দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘এই পুরো ঘটনার ভিডিয়ো আমাদের কাছে রয়েছে। এর আগেও প্রায় ১৫ বার রাজভবনে গিয়েছেন শুভেন্দু। তাই এখন বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যপালের সঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’দের দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। এই নিয়ে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। সেই মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন বিচারপতি সিংহ। দুপুরে শুনানির পর বিচারপতি জানিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে শুভেন্দুকে।
ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’ মানুষজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ছিল তাঁদের। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজভবনের ভিতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। শুভেন্দুর অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। সে কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার করে ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। বিজেপি নেতা আরও দাবি করেছিলেন, দেশে যখন জরুরি অবস্থা জারি ছিল, তখনও এই রকম ঘটনা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্যাসিবাদী রূপ’ প্রকাশ্যে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। পুরো ঘটনায় রাজভবনের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। এর পর শুক্রবার সকালেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা।