— নিজস্ব চিত্র।
শীতকাল মানে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। বছরশেষের এই সময়টায় যতই সাহেবি চালে খাওয়াদাওয়ার চেষ্টা থাকুক মনের কোণে আটকে থাকা বাঙালি দু’দিনেই ছটফটিয়ে ওঠে। চেনা স্বাদ পেতে চায়। তবে উৎসবের মরসুমে তো চেনা স্বাদে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। চেনা হোক বা অচেনা, খাওয়াদাওয়াতে চাই ‘হঠকে’ কিছু। তবেই না হট কচৌরির মতো মুচমুচে হবে শীতের সান্ধ্যভোজ এবং শীতকালীন আড্ডা। বাঙালির মন বুঝে তাই শীতকালীন ভোজের মেনু সাজিয়ে দিলেন শহরের বাঙালি রেস্তরাঁ ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’-এর রন্ধনশিল্পী সুশান্ত সেনগুপ্ত।
প্রথম পাতের মেনু থেকে শেষ পাতের মিষ্টিমুখ পর্যন্ত তিনটি পদ সাজিয়েছেন শেফ। সব মেনুতেই রয়েছে শীতকালীন বিশেষত্ব। কোনটা কেন বেছে নিয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন সুশান্ত।
মৌরলা মাছের পেঁয়াজি
চারপাশে মজলিসি মেজাজ। বাইরে রেস্তরাঁতে তো বটেই, সপ্তাহান্তে সুযোগ পেলে মজলিসি মৌতাত জমে উঠছে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেও। শেফ সুশান্ত বলছেন, মজলিসি সন্ধ্যায় পানভোজনের আসরকে জমিয়ে দিতে পারে মৌরলা মাছের এই পদটি।
— নিজস্ব চিত্র।
উপকরণ—
১০০ গ্রাম মৌরলা মাছ
১টি পাতিলেবুর রস
১/২ চা চামচ কাশ্মীরী লাল লঙ্কা গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ ভুট্টার আটা
১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো
২টি পেঁয়াজ
১ চা চামচ আদা-রসুনের রস
১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১/৪ টেবিল চামচ ময়দা
স্বাদ মতো নুন-চিনি
ভাজার জন্য সাদা তেল
প্রণালী—
মৌরলা মাছ পরিষ্কার করে লেবুর রস, আদা-রসুনের রস, কাশ্মীরী লঙ্কার গুঁড়ো, নুন এবং হলুদ দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। পেঁয়াজ সরু সরু করে কেটে তাতেও কাশ্মীরী লঙ্কার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন।
ভুট্টার আটা বা কর্ন ফ্লাওয়ার, চালের গুঁড়ো, ময়দা, সামান্য নুন আর জল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ওই মিশ্রণ কিছুটা মাছের উপর আর কিছুটা পেঁয়াজের উপর দিয়ে মাখিয়ে নিন।
তেল গরম করে প্রথমে মাছগুলি ছাড়ুন। ৩/৪ ভাগ রান্না হয়ে এলে তার উপর ব্যাটারে ডোবানো পেঁয়াজ ছড়িয়ে দিন। ভাল ভাবে ভাজা হয়ে গেলে উপরে বীট নুন ছড়িয়ে কাসুন্দির সঙ্গে পরিবেশন করুন।
গন্ধরাজ ভেটকি পাতুরি
শীতকাল হল লেবুর সময়। আর গন্ধে লেবুর রাজা গন্ধরাজ। বাজারে এই সময়টায় টাটকা গন্ধরাজ লেবু পাওয়া যায়। শীতের পাতে ভেটকি মাছের পাতুরিকে তাই শেফ দিয়েছেন গন্ধরাজের সুবাস।
—নিজস্ব চিত্র।
উপকরণ—
২৫০ গ্রাম (৪টি) কাঁটাছাড়া কলকাতা ভেটকির ফিলে
১/২ কাপ নারকেল কোরা বাটা
১ টেবিল চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
১/৩ কাপ কাজুবাদাম বাটা
১ টেবিল চামচ পোস্ত বাটা
১টি গন্ধরাজ লেবুর রস এবং খোসার সবুজ অংশটি কোরানো
১ টেবিল চামচ আদাবাটা
২ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
২ টেবিল চামচ সাদা ঘি
৪-৬টি কলাপাতার টুকরো
নুন এবং চিনি স্বাদ মতো
প্রণালী—
মাছের ফিলেগুলোকে ভাল করে পরিষ্কার করে ন্যাপকিন দিয়ে জল ভাব শুকিয়ে নিন। এ বার গন্ধরাজ লেবুর রস, খোসা কোরানো, নুন, কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিন।
নারকেল কোরা বাটা, কাজু বাটা, পোস্ত বাটা, আদা বাটা, ঘি, সর্ষের তেল, নুন এবং চিনি দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ম্যারিনেট করা মাছগুলি ওর মধ্যে দিয়ে ভাল ভাবে মাখিয়ে নিন।
কলাপাতা সেঁকে নরম করে নিয়ে তার মধ্যে মশলাসমেত এক একটি ভেটকির ফিলে দিয়ে ভাল ভাবে মুড়ে নিন। তার পরে ৮-১০ মিনিট তাওয়ায় ভাজুন বা গ্রিল প্যানে গ্রিল করুন।
গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
ডাব মালাই পিঠে
শীত মানেই পিঠেপুলি। শীত মানে নলেন গুড়ও। শীতের সেই গুড় আর পিঠেকেই একটু অন্য রকম বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে ডাবের শাঁস বা মালাই দিয়ে। পৌষপার্বণের আগেই নয় হোক পিঠে উৎসব।
ছবি : শাটারস্টক।
উপকরণ—
অর্ধেক নারকেলের দুধ
অর্ধেক নারকেল কোরানো
একটি কচি ডাবের শাঁস বা মালাই
৫০ গ্রাম খোয়া ক্ষীর
২০০ গ্রাম চালের গুঁড়ো
১৫০ গ্রাম নলেন গুড়
৫০ গ্রাম চিনি
৩টি ছোট এলাচ
১০০ গ্রাম দুধ
প্রণালী—
প্রথমে দুধ দিয়ে চালের গুঁড়ো ভাল করে মেখে নিন। এ বার কড়া গরম করে তাতে কোরানো নারকেল, ক্ষীর, নলেন গুড়, অর্ধেক চিনি দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। যত ক্ষণ না নারকেলে চিটচিটে ভাব আসছে। তৈরি হয়ে গেল পিঠের পুর।
এ বার চালের গুঁড়ো মাখা থেকে ছোট ছোট লেচি বানিয়ে তাতে সামান্য পুর দিয়ে পছন্দমতো আকৃতির পুলি তৈরি করে ফুটন্ত জলে ২-৩ মিনিট রেখে তুলে নিন।
ডাবের শাঁস, নারকেলের দুধ, খোয়া ক্ষীর, এলাচ আর বাকি চিনি দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এ বার সিদ্ধ পুলির উপর ওই মিশ্রণ দিয়ে উপরে শুকনো মেওয়া ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।