বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র ।
রাজ্যপালের সঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’দের দেখা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। দুপুর ২টোয় এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’ মানুষজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজভবন অভিযানে নামেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ছিল তাঁদের। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজভবনের ভিতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। শুভেন্দুর দাবি ছিল, পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। সে কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। বিজেপি নেতা আরও দাবি করেন, দেশে যখন জরুরি অবস্থা জারি ছিল, তখনও এই রকম ঘটনা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্যাসিবাদী রূপ’ প্রকাশ্যে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি এবং ‘আক্রান্ত’-রা শুক্রবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। পুরো ঘটনায় রাজভবনের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে শুভেন্দু। এর পর শুক্রবার সকালেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
হাই কোর্টে শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে এবং ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’দের রাজভবনে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এই বিষয়ে তাঁকে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ।
বিজেপি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে ‘আক্রান্ত’দের বিষয়ে বার বার সরব হয়েছে। ‘ঘরছাড়া’ মানুষজনের জন্য উত্তর কলকাতায় বিজেপির উদ্যোগে ধর্মশালা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনিও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছেন। দাবি করেছেন, ‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী’রা এ সব করেছেন। তৃণমূল যদিও এই দাবি মানেনি। রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
এর পর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল শুভেন্দুদের। সেই মতো রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সঙ্গে একটি বাসে ছিলেন ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’রা। ক্যানিং, যাদবপুর, ভাঙড়, উলুবেড়িয়া, কুলতলি থেকে এসেছিলেন তাঁরা। শুভেন্দুর দাবি, রাজভবনের বাইরে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বিজেপি জানিয়েছে, কেন আটকানো হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ্যপালের দফতরের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। তাঁদের তরফে বলা হয়, রাজভবনের বাইরের চত্বর কলকাতা পুলিশের অধীনে। তাই এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই।
গত সোমবারও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু। পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় আক্রান্তদের নিরাপত্তা চেয়ে তাঁর আইনজীবী সোমবার এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে আরও কয়েক দিন রাজ্যে রেখে দেওয়া হয়, সেই আবেদনও করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। মামলা দায়ের করার অনুমতি দেয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পরেই গত বুধবার হাই কোর্ট জানায়, আগামী ২১ জুন পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এর পর শুক্রবার পুলিশের বিরুদ্ধে রাজভবনে ‘আক্রান্ত’দের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ বিরোধী দলনেতা।