শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডির আধিকারিকেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইডির বেঁধে দেওয়া সময় পেরিয়েছে সোমবার বেলা ১১টায়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেননি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পর্যন্ত ইডি দফতরে যাননি কোনও আইনজীবীও। এই আবহে এ বার মুখ খুললেন ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতার ভাই শেখ আলমগীর।
সোমবার ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে আলমগীর বলেন, “সকলেরই আইনকে সম্মান দেওয়া উচিত। তাই আইনত যা করা উচিত, সেটা করাই ভাল।” গত কয়েক দিনে শাহজাহানের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে আলমগীর বলেন, “ওঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি। উনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।” বাড়িতে একাধিক বার ইডি হানা দেওয়ার ফলে তাঁদের ‘অসুবিধার মধ্যেই পড়তে হয়েছে’ বলে জানান আলমগীর।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দ্বিতীয় বারের জন্য সন্দেশখালিতে শাহজাহানের ডেরায় হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। শাহজাহানের বাড়ির পাশেই আলমগীরের বাড়ি। বুধবার সেই বাড়িতেও হানা দিয়েছিল ইডি। শাহজাহানের বাড়ির একাধিক তালার চাবি চাইতেই হানা দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু আলমগীরের স্ত্রী জানিয়ে দেন, তাঁদের কাছে কোনও চাবি নেই। ওই দিন সকাল ৭টা নাগাদ সন্দেশখালি গিয়ে প্রথমে শাহজাহানের বাড়ির চাবি খুঁজতে বেরিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। চাবি খুঁজতে তৃণমূল নেতার ভাইদের বাড়িও যান তাঁরা। তবে কারও কাছে চাবি না মেলায়, শেষমেশ তালা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। তার পর থেকে টানা তল্লাশি চলেছে। তল্লাশি শেষ করে শাহজাহানের বাড়িতে নতুন তালা লাগানো হলেও সেই চাবি নিতে চাননি তৃণমূল নেতার কোনও ভাই-ই।
রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তের সূত্রে গত ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখানে পৌঁছে তারা বিক্ষোভের মুখে পড়ে। গ্রামবাসীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে ইডির তদন্তকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। মার খান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। ইডির তিন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তাঁদের মধ্যে এক জনের চোট ছিল গুরুতর। ইডির দাবি, শাহজাহানের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন ৮০০ থেকে ১০০০ লোক। সকলেই তৃণমূল নেতার ‘অনুগামী’। ওই দিন শাহজাহানের দেখা মেলেনি। তার পর ২৪ দিন কেটে গেলেও এখনও দেখা নেই শাহজাহানের।
গত বুধবার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে নোটিস টাঙিয়ে এসেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। তাতে বলা হয়েছিল, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। নোটিসে আরও লেখা ছিল যে, রেশন মামলায় শাহজাহানের হাজিরা জরুরি। তাই ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর ধারা অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু নথিও। শাহজাহানকে ইডি দফতরে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে রাখতে হবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং নিজের পাসপোর্ট আকারের ছবি।