নিয়োগ রাজনীতির লড়াই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বৃহস্পতিবার রাতের করুণাময়ী-কাণ্ড কাজে লাগাতে মরিয়া রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই ওই আন্দোলনের ফয়দা তুলতে পথে নেমে পড়েছে সিপিএম। অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির থেকে কিছুটা এগিয়েই রয়েছে সিপিএম। এই পরিস্থিতিতে কী করে বিষয়টি নিয়ে পথে নামা যায়, তা ঠিক করতে শুক্রবার সকাল থেকেই বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনও পর্যন্ত আন্দোলনের কোনও কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে শুক্রবারের মধ্যে তা ঠিক করে শনিবার থেকেই পথে নামতে চায় গেরুয়া শিবির।
আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘যে ভাবে চাকরিপ্রার্থীদের তুলতে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা লাগাতার আন্দোলনে নামতে চলেছি। এই রাজ্য সরকারকে গদি থেকে না নামানো পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘এ নিয়ে বিজেপি কোন মুখে আন্দোলন করবে? ওরা তো গোটা দেশে এমনটা করে! বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দুর্নীতির অন্ত নেই। আর আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপিও একই ভূমিকা নেয়।’’
চাকরি নিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিজেপি শিবির যে সিপিএমকে ভয় পাচ্ছে, সেটা প্রত্যাশিত ভাবেই তারা স্বীকার করতে চাইছে না। সুকান্ত বলেন, ‘‘সিপিএমের কোনও অস্তিত্বই নেই রাজ্যে। একজনও বিধায়ক নেই। মানুষের ভরসাও নেই। ফলে সিপিএমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ বৃহস্পতিবার রাতে যখন করুণাময়ী থেকে আন্দোলনকারীদের পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছিল, তখন সেখানে হাজির ছিলেন সিপিএমের যুব সংগঠনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঘটনাস্থলেই সরব হন। সঙ্গে তাঁর সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। বিজেপির পক্ষে অবশ্য ছিলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিজেপির কলকাতা বিভাগের ইন-চার্জ সজল ঘোষ। যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, তাঁরাও আন্দোলনকারীদের পাশে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরেই করুণাময়ীর বিক্ষোভ মঞ্চে গিয়েছিলেন সুকান্ত। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা উত্তরের সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। তবে বৃহস্পতিবার রাতে সজল ছাড়া বিজেপি নেতারা ঘটনাস্থলে যাননি। শুধুই টুইট করেন সুকান্ত, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষরা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথম থেকে চাকরি-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারও সেটাই চেয়েছিল। কারণ, এই বিষয়টির ‘সামাজিক অভিঘাত’ অনেক বেশি। বহু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। একই সঙ্গে শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণ মানুষের কাছেও ‘স্পর্শকাতর’। কেন্দ্রের এই ভাবনা থেকেই তদন্তকারী সংস্থাগুলি অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব পেলেও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শিক্ষাকর্তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যে হেতু শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, তাই প্রথম থেকেই কিছুটা এগিয়ে রয়েছে সিপিএম। যা নিয়ে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির তো অনেক আইনজীবী রয়েছেন। তাঁরা কেউ তো এগিয়ে আসেননি। এই নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক সংস্থাই এগিয়ে আসতে পারত। তারাও এগিয়ে আসেনি। তবে আমরা এই আন্দোলন নিয়ে নতুন করে রাজনীতি করতে চাইছি না। কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের স্থায়ী আন্দোলন রয়েছে। তার সঙ্গে এটা যুক্ত হয়েছে।’’
করুণাময়ীতে যে পুলিশ ‘সক্রিয়’ হতে পারে, তার আন্দাজ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সে ভাবে গেরুয়া শিবিরের কোনও প্রস্তুতি ছিল না। অন্য দিকে, সিপিএম আগে থেকেই দলবল নিয়ে করুণাময়ীতে ছিল। সেলিম জানিয়েছেন, যুব সংগঠনকে সামনে রাখা হলেও ওখানে ছাত্র সংগঠন এবং মূল দলের নেতারাও ছিলেন। সেই সঙ্গে দলের আইনজীবী এবং চিকিৎসক শাখার কর্মীরাও আগে থেকেই ছিলেন। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা এই বিষয়টা নিয়ে এখন রাজনীতি করতে নামিনি। বরাবরই আমরা বেকার যুবক-যুবতীদের পাশে রয়েছি। বিজেপি এখন নতুন করে নামতে চাইলেও কেউ গ্রহণ করবে না। কারণ, চাকরি দেওয়ার নামে ওরাও যুবদের বঞ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও চাকরি দেওয়ার নামে ভাঁওতা দিয়ে চলেছেন।’’
সিপিএম মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুললেও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনকে কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচিকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। শনিবার থেকে ১০ লক্ষ চাকরি দিতে ‘রোজগার মেলা’ শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দিন ৭৫ হাজারেরও বেশি মনোনীত প্রার্থীকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে। নতুন কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করবেন মোদী। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গেও দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতীকী চাকরি বিলি করবেন। সেই কর্মসূচি কাজে লাগিয়েই বিজেপি এখন চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে গেরুয়া হাওয়া আনতে চায়। বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবারের মোদীর কর্মসূচির পরেই রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামবে দল। তখন আরও দেরি হয়ে যাবে কি না, সিপিএম আরও একটু এগিয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।