প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রের উদ্যোগে হিন্দি এবং স্থানীয় ভাষায় ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বই তৈরি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইংরেজিতে ক্লাস লেকচার যাতে স্থানীয় ভাষায় পড়ুয়ারা শুনতে পান 'স্পিচ টু স্পিচ প্রজেক্ট' এর মাধ্যমে সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ক্লাসে হেড ফোনে এই লেকচার শুনতে পাবেন পড়ুয়ারা।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করে এই পদ্ধতি চালু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই ‘মেশিন লার্নিং’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আইআইটি বম্বে, আইআইটি মাদ্রাজ, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্পিচ টু স্পিচ’ প্রকল্পের কাজ চলছে। সূত্রের খবর, ২০২৩-'২৪ শিক্ষাবর্ষে এই প্রকল্প চালু করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। প্রথম ধাপে হিন্দি, মরাঠি, তামিল, তেলুগুতে শুরু হবে। এর পরে বাংলা-সহ অন্য সব স্থানীয় ভাষায় হওয়ার কথা।
আইআইটি বম্বের কম্পিউটর সায়েন্সের শিক্ষক পুষ্পক ভট্টাচার্য জানালেন, এই বিষয়ে কাজ এখন পুরোদমে চলছে। প্রথমে 'বহুভাষক' প্রকল্পের অধীনে এই কাজ আইআইটি বম্বে শুরু করছিল। এখন এই প্রকল্প ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজি মিশনের 'ভাষানী' প্রকল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনুবাদের কাজ চলছে। আগামী বছরের মধ্যেই ক্লাসঘরে এর বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গোড়ায় আইআইটি বম্বেয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাসগুলিতে এই পদ্ধতিতে পড়ানো চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ্যবই হিন্দি এবং স্থানীয় ভাষায় হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভাষায় পঠনপাঠন পড়ুয়াদেরই ক্ষতি করবে বলে শিক্ষা মহলের একাংশের মত। ক্লাস লেকচার স্থানীয় ভাষায় শুনতে পাওয়া নিয়ে এ দিন রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ম্যাকাউট) উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাষায় টুকটাক কিছু শেখা যায়। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পঠনপাঠন গোটাটা স্থানীয় ভাষায় হলে পড়ুয়ারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ তাঁর যুক্তি, বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজিতে না পড়লে উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরির জগতে পড়ুয়ারা অসুবিধায় পড়বেন। স্থানীয় ভাষায় ক্লাস লেকচার হলেও পাশাপাশি পড়ুয়ারা যাতে ইংরেজিতে শক্তিশালী হন, সেই দিকে নজর দেওয়া জরুরি। বিষয়টি নিয়ে এনআইটি দুর্গাপুরের অধিকর্তা অনুপম বসু এ দিন বলেন, "হিন্দি শুধু নয়, যে কোনও মাতৃভাষার মাধ্যম উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতেই পারে। তবে তার জন্য সুদীর্ঘ প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই সহায়তা ইংরিজিকে বাদ দিয়ে নয়।’’ সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক তরুণকান্তি নস্করও বলেন, ‘‘প্রযুক্তির মাধ্যমে যে ভাষান্তর হবে তাতে শিক্ষক যা বলতে চাইছেন তা সঠিক ভাবে হবে কি না, তা যাচাই করার কোনও সুযোগ থাকবে না। স্থানীয় ভাষায় মেডিক্যাল বা কারিগরি বিষয়গুলির পরিভাষা এখনও তৈরি না হওয়ার ফলে অনুবাদও ঠিকঠাক না-হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দুই ভাষায় শিক্ষিত ডাক্তার অপারেশন টেবিলে অভিন্ন ভাষা না পেলে কী ভাবে মত বিনিময় করবে?’’