দিলীপে আস্থা বহাল বিজেপি নেতৃত্বের। ফাইল চিত্র।
তাঁকে ঘিরে যতই বিতর্ক থাকুক রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ যে গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়ে দিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য নেতৃত্বকে দিলীপ অস্বস্তিতে ফেলছেন বলে মাস কয়েক আগে অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার তরফে। এ বার সেই নড্ডা যে নতুন কোর কমিটি গঠন করলেন, তাতে তিন নম্বরে দিলীপের নাম। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরেই। প্রসঙ্গত, বিজেপির সংবিধান অনুসারে রাজ্য সংগঠনে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদ রাজ্য সভাপতি। তার পরে পরিষদীয় নেতা তথা বিরোধী দলনেতা বা মুখ্যমন্ত্রী।
নতুন কোর কমিটিতে যদিও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হলেও এর আগে রাজ্যের কোনও দায়িত্বে ছিলেন না। তবে বিজেপির অন্দরে মিঠুনের মতো দিলীপকে নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। তাঁকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চিঠি দেওয়ার পরে অনেকেই মনে করেছিলেন বাংলার দায়িত্বে আর রাখাই হবে না দিলীপকে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেককেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুকান্ত জমানায়। তবে সুকান্তরা বার বার একটি কথা বলে এসেছেন যে, দিলীপ ছাড়া রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক বিকাশ সম্ভব নয়। সেই কারণেই নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে অন্যতম মুখ করা হয় দিলীপকে।
এ বার মোট ২৪ জনের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন নড্ডা। এর মধ্যে ২০ জন সাধারণ সদস্য এবং বাকি ৪ জন আমন্ত্রিত। এই ৪ জনই বাংলার দায়িত্ব প্রাপ্ত ভিন্ রাজ্যের নেতা। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং দুই সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এবং আশা লাকরা।
নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা দিলীপকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের বাইরেও নানা জল্পনা হতে থাকে। তৃণমূলের অনেক নেতাও দিলীপ বঞ্চিত এবং নিজের দলে যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না বলে প্রকাশ্যে জানান। আবার দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতারাও বলতে থাকেন যে, রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসন এবং ৭৭টি বিধানসভা আসন জয়ের কাণ্ডারি দিলীপ। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলায় বিজেপির উত্থান সম্ভব নয়। তেমন আবহেই দিলীপের গুরুত্ব প্রাপ্তি দেখা গেল সোমবারের ঘোষিত নতুন কোর কমিটিতে।এই কোর কমিটি গড়াই শুধু নয়, তা কী ভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারেও সোমবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ এসেছে রাজ্য বিজেপির কাছে। বলা হয়েছে, প্রতি মাসে কমপক্ষে এক বার এই কমিটিকে বৈঠকে বসতে হবে। সেই বৈঠকেই ঠিক হবে কোন পথে চলবে রাজ্যের সংগঠন। সেখানেই বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিক হবে। রাজ্য সংগঠন এবং পরিষদীয় দলের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার নজিরও রয়েছে নতুন কোর কমিটিতে। জায়গা পেয়েছেন বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা।
কয়েক মাস আগেই বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনটি রাজ্যে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়— তেলঙ্গানা, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ। এর পরেই এই তিন রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশের সফল নেতা সুনীল বনসলকে। রবিবারই কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠক করেন সুনীল। সম্প্রতি রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী মঙ্গল পাণ্ডে। সোমবার তিনি কলকাতায় রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যখন বৈঠক করছেন, তখনই ঘোষণা হয় নতুন কোর কমিটির। এই রাজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত এই কোর কমিটি ঘোষণার মধ্যেও রয়েছে বলে দাবি বিজেপি শিবিরের। কোনও রাজ্যের কোর কমিটি সর্বভারতীয় সভাপতি ঘোষণা করছেন সাম্প্রতিক কালে এমনটা দেখা যায়নি বলেও দাবি করছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, বাংলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই এমনটা করলেন নড্ডা।