বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অচল বলে মনে হয়। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক— প্রত্যেকেরই দৈনন্দিন জীবনে এই দুই জিনিস অপরিহার্য।
পড়ুয়াদের জীবনে বিদ্যুৎ এবং সঠিক ইন্টারনেট পরিষেবার গুরুত্ব তো আরও বেশি। আজকাল সরকারি অনেক পরিষেবাও মেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযোগ করানোর জন্য ভিড় লক্ষ করা যায় অনেক পরিষেবা কেন্দ্রে।
আবার ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, স্কুল, সরকারি কার্যালয়, আদালত, সব জায়গাতেই বহু কাজ হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
অনেক দিন ধরেই ইন্টারনেট মারফত সারা দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিকে জুড়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। কিন্তু ভারতেই এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে ইন্টারনেট তো দূর অস্ত্, বিদ্যুৎই ব্যবহার করা হয় না।
শুধু বিদ্যুৎ কেন, গ্যাস, আলো, পাখা, মোটর ব্যবহারের চল নেই সেই গ্রামে। মানুষ যে একবিংশ শতাব্দীতে বাস করছে, তা ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দেখে বোঝার জো নেই।
কথা হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্মা গ্রামের। শ্রীকাকুলাম শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই গ্রামের বাসিন্দারা জীবনযাপন করেন প্রাচীন পদ্ধতি মেনে।
সেই গ্রামের বাসিন্দারা সাফ জানিয়েছেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন তাঁদের নেই। বরং, পুরনো ঐতিহ্য নিয়েই বেঁচে থাকতে স্বচ্ছন্দ্য তাঁরা।
কুর্মা গ্রামের সব ঘরই ‘পেনকুটিল্লু’, যার অর্থ এমন বাড়ি যা চুন এবং কাদা দিয়ে তৈরি। প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করার পরেই চোখে পড়বে একট হলঘর এবং হলঘর সংলগ্ন একটি ‘নাইয়া’ বা কুয়ো।
‘নাইয়া’, জল সংরক্ষণের একটি ঐতিহ্যগত কৌশল, যা গৃহস্থালীর জল সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঢুকলেই হলঘরের ডান দিকে একটি পুজোর ঘর এবং তার পাশেই রান্নাঘরের দেখা মিলবে।
রান্নাঘরগুলিতে খাবার রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জামের পাশাপাশি কাঠের উনুন দেখতে পাওয়া যায়।
হলের বাঁ দিকে দু’টি শোওয়ার ঘর। শয়নকক্ষগুলিতে মাটির তৈরি ছোট ছোট কুটুরি রয়েছে। ওই কুটুরিগুলি জামাকাপড় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
কুর্মা গ্রামের বাসিন্দারা ঘরের মেঝে মাটি এবং গোবরের মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার করেন। গ্রামবাসীদের দাবি, গোবর দিয়ে নিকনোর কারণে তাঁদের বাড়ির মেঝেয় ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার আশঙ্কা কম।
গোবর ও মাটির একই রকম প্রলেপ প্রতি সপ্তাহে বাড়ির দেওয়ালেও ব্যবহার করা হয়। কুর্মা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে শৌচকর্ম এবং স্নানের জন্য পৃথক ঘর রয়েছে।
পচনশীল বর্জ্য থেকে কুর্মার বাসিন্দারা বিশেষ ধরনের ছাই তৈরি করেন, যা পরে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
কুর্মা গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করার ঘোর বিরোধী। মনে করেন, ওই দুই জিনিস গ্রামে ব্যবহার শুরু হলে ঐতিহ্য নষ্ট হবে। আর সে কারণেই তাঁরা বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটকে গ্রামে ঢুকতে দেননি।