বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া (বাঁ দিকে), মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল ছবি।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিজেপি সমর্থকদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের মধ্যে মতভেদ প্রকাশ্যে। শুভেন্দু-লকেটের মতো নেতা বিষয়টি সমর্থন করলেও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এ ভাবে বিজেপির রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে সেই দলেরই নির্বাচিত সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার।
শুক্রবার, হাওড়া স্টেশনে বাংলার প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু করেন উপস্থিত বিজেপি সমর্থকেরা। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়। এই ঘটনার পর শুভেন্দু অধিকারী, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা প্রকাশ্যেই সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগানদাতাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ভিন্ন মত গেরুয়া শিবিরেরই অন্য এক জনপ্রতিনিধির। তিনি বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। বঙ্গ বিজেপির বাকি নেতারা সমস্বরে ঘটনাকে সমর্থন করলেও সুরেন্দ্রর বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেওয়াই উচিত ছিল।’’
বঙ্গ বিজেপিতে তাঁর সতীর্থেরা যে ভাবে খোলাখুলি সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তখন সুরেন্দ্রর এই মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মঞ্চেই সুরেন্দ্রর পাশে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। স্লোগান বিতর্কের প্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘জয় শ্রীরাম স্লোগান নয়, মমতার মূল আপত্তি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এক মঞ্চে থাকা নিয়ে। কারণ, আমিই তাঁকে নন্দীগ্রামে হারিয়ে কম্পার্টমেন্টাল সিএম বানিয়েছি। লেটেস্ট ড্রামাবাজ মমতাজি!’’ একই সুরে বলেছিলেন লকেটও। কিন্তু সুরেন্দ্র যে সেই পথের পথিক হতে চাননি তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের অনুষ্ঠানে নানা রকম লোকজন আসেন। তবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেওয়াই উচিত।’’
এর আগে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজিকে নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানে দর্শকাসন থেকে জয় শ্রীরাম স্লোগান ওঠে মমতার উদ্দেশে। মঞ্চে দাঁড়িয়েই তার প্রতিবাদ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারও মঞ্চেই থাকার কথা ছিল মোদীর। মায়ের প্রয়াণের কারণে তিনি কলকাতা আসতে পারেননি। তবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন। এই পরিস্থিতিতেই মমতা অনুষ্ঠান মঞ্চে (২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম) আসতেই দর্শকাসন থেকে শুরু হয়ে যায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। পরিস্থিতি এমন হয় যে স্বয়ং রেলমন্ত্রী এবং বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও থামানো যায়নি স্লোগানদাতাদের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, স্লোগান দেওয়ার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না কি তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আদৌ ছিল না উদ্যোক্তা বা বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের? শুভেন্দু-লকেটদের উল্টো পথে হেঁটে অহলুওয়ালিয়ার ঠারেঠোরে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার বিরোধিতা সেই প্রশ্নে ভিন্ন মাত্রা জুড়েছে।
সুরেন্দ্র দীর্ঘ দিন বাংলার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কংগ্রেস করার সময় থেকেই মমতার সঙ্গে তাঁর সখ্য। পরে বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় মমতার মন্ত্রিত্বের সময় তা আরও গাঢ় হয়। বস্তুত, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর আরও অনেকের সঙ্গে সুরেন্দ্র তৃণমূলে আসতে পারেন বলে জল্পনাও ছড়িয়েছিল। বাস্তবে তা ঘটেনি। সুরেন্দ্র বিজেপিই আছেন, বহাল তবিয়তে। যদিও বঙ্গ বিজেপির বাকি নেতাদের পথের পথিক তিনি হননি। শুক্রবার তা ফের একবার দেখালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী।