Hiran Chatterjee

Hiran Chatterjee: দিলীপের উপর ক্ষোভে গ্রুপ-ত্যাগ হিরণের, দলবদলের ইঙ্গিতও কি দিলেন প্রকারান্তরে

হিরণের শেষ বাক্যটি নিয়েই জল্পনা। শাসক তৃণমূলের প্রধান প্রচার বলে তারা ‘উন্নয়ন’-এর পক্ষে। হিরণ বলেছেন, যেখানে উন্নয়ন সেখানেই তিনি থাকবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২ ১২:১৫
Share:

দিলীপ ঘোষ এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায়।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানিয়ে দিলেন খড়্গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিলীপ ঘোষ খড়্গপুরে আসেন। নিজের মতো সভা করেন। আমাকে কিছু জানান না! আমি যেখানে উন্নয়ন, সেখানে থাকব।’’ প্রসঙ্গত, দিলীপ আগে ছিলেন খড়্গপুরের (নির্বাচন কমিশনের দলিলে ‘খড়্গপুর সদর’) বিধায়ক। আপাতত তিনি মেদিনীপুরের সাংসদ। খড়্গপুর বিধানসভা তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।

হিরণের বক্তব্যের শেষ বাক্যটি নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। কারণ, শাসক তৃণমূলের প্রধান প্রচারই হল, তারা ‘উন্নয়ন’-এর পক্ষে। অতএব হিরণ যদি বলেন, যেখানে উন্নয়ন, সেখানেই তিনি থাকবেন, তা হলে তা তাঁর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জল্পনাই তৈরি করে। এখন দেখার, হিরণ সেই পদক্ষেপ করেন কি না।

Advertisement

হিরণের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বিধায়কের ক্ষোভ, বাংলার বিজেপি তাঁকে ‘কাজে লাগায়নি’। বিষয়টি হিরণ কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানিয়েছেন। সাংগঠনিক ভাবে তাঁকে রাজ্য বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে না। যদিও বিধায়ক হিসেবে তিনি নিজের কাজ করে চলেছেন। তিনি কলকাতায় না-থেকে তাঁর কেন্দ্র খড়্গপুরেই থাকেন। একাধিক চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের আরও বক্তব্য, তৃণমূলে যোগ দেওয়া বা দলবদল নিয়ে কারও সঙ্গেই তাঁর কোনও কথা হয়নি। তেমন কোনও পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি।

রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে ‘মতুয়া-বিদ্রোহ’ চলতে চলতেই দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন হিরণ। প্রসঙ্গত, হিরণ হলেন বিজেপি-র দশম বিধায়ক, যিনি দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন। এর আগে বাঁকুড়ার চার বিধায়ক এবং পাঁচ মতুয়া বিধায়ক গ্রুপ ছেড়েছিলেন। বুধবার সকালে হিরণের গ্রুপ ছাড়ার খবর জানা যায়।

Advertisement

টলিউড অভিনেতা হিরণ তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। গত বিধানসভা ভোটে তিনি খড়্গপুর থেকে নির্বাচিত হন। সম্প্রতি দলের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিধানসভা এলাকায় তাঁর মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল। দিলীপের একটি সভা নিয়ে সেই মতান্তর প্রকাশ্যেও চলে এসেছিল। হিরণের বুধবারের বক্তব্যে স্পষ্ট, দিলীপের উপর তাঁর ক্ষোভ যায়নি। উল্টে তা আরও বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকার সময় হিরণ মূলত যুব তৃণমূলের হয়েই কাজ করেছেন। তৎকালীন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল ছিল। কিন্তু তার পরে সেই সমীকরণে খানিকটা পরিবর্তন আসে। তার ফলস্বরূপই হিরণ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন বলে তখন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছিলেন।

জীবনে প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়ে জয়ও পেয়েছিলেন হিরণ। খড়্গপুরে তৃণমূলের ডাকাবুকো প্রার্থী প্রদীপ সরকারকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাঁরা দিলীপের ঘনিষ্ঠ বলেই দলের এক সূত্রের দাবি। অথচ হিরণের ঘনিষ্ঠদের দাবি, মেদিনীপুর থেকে বিধানসভা ভোটে তিনিই বিজেপি-র হয়ে একা জিতেছিলেন। অথচ, বিজেপি তাঁকে কাজে লাগায়নি।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই মতুয়া নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বিজেপি-র মতুয়া বিধায়কেরা হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। শান্তনু নিজেও তেমনই করেছেন। তারই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট ভাষায় টুইট করে জানিয়েছেন, তাঁর এবং বিজেপি-র আর পরস্পরকে প্রয়োজন নেই। অসমর্থিত সূত্রের খবর, শান্তনু-সহ মতুয়া বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। কিন্তু তাতে ক্ষোভের প্রশমন হয়েছে, এমন কোনও খবর নেই। এর মধ্যেই হিরণের গ্রুপ ছাড়লেন। যে বিষয়ে বিজেপি আরও অস্বস্তিতে পড়বে। এখন দেখার, এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ কী করে সামাল দেন দলীয় নেতৃত্ব। যদিও রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement