প্রতীকী ছবি।
শুরুটা হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের সময়েই। এ বার আসানসোল পুরভোটের আগেও, ফের অন্তত দু’টি ঘটনায় জামুড়িয়ায় দলের অন্দরের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে আসছে বলে মনে করছেন বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। যদিও, বিজেপির নেতৃত্ব বিষয়টি মানেননি।
ঘটনা দু’টি— এক, ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি, তথা জামুড়িয়ার নেতা রাজু বাউড়ির সামাজিক মাধ্যমে দল ছাড়ার ঘোষণা। দুই, জামুড়িয়ার অন্তত দু’দশকের পুরনো বিজেপি নেতা রামপ্রসাদ লায়েকের নির্দল হয়ে আট নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে পড়া।
দলের একটি সূত্রের মতে, রাজু বিজেপির অন্দরে জামুড়িয়ার প্রবীণ নেতা সন্তোষ সিংহের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ঘটনাচক্রে, বিধানসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণার কিছু দিন পরেই দেখা গিয়েছিল, সন্তোষ ও বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহ এক সঙ্গে হোলি খেলছেন। সেখানে দেখা গিয়েছিল রাজুকেও। ওই ঘটনাকে নেহাতই ‘সৌজন্যমূলক’ বলে দাবি করেছিলেন সন্তোষ। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সাংগঠনিক পদ ও দল ছাড়ার ঘোষণার পরে, সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে রাজু বলেন, “জামুড়িয়ায় বিজেপির দু’টি মণ্ডলে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ হয় না। নতুন নেতা, কর্মীদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” তবে সূত্রের খবর, সাংগঠনিক পদ ও দল ছাড়ার কথা রাজু এখনও লিখিত ভাবে জানাননি। রাজুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, “সংগঠনের বিদায়ী জেলা সভাপতিকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।”
৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন এলাকার দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা বলে পরিচিত রামপ্রসাদ। কেন এই সিদ্ধান্ত? রামপ্রসাদের অভিযোগ, দলের ‘অসময়ের সঙ্গী’দের পুরভোটে প্রার্থী করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ২, ৯, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীদের কথা বলেন। পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, “৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি, এর আগে দু’বার পুরভোটে তিনি প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন। ফের, তাঁকেই প্রার্থী করার অর্থ, দলের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নষ্ট করা!” রামপ্রসাদের দাবি, তিনি ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপি করেন। দলের স্থানীয় কর্মীদের দাবিতেই তিনি নির্দল প্রার্থী, এমনই জানান রামপ্রসাদ।
যদিও বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “আসানসোল পুরভোটে দল যাঁদের প্রার্থী করেছে, তাঁদের ৯৮ শতাংশ পুরনো নেতা, কর্মী। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলে কথা বলে মিটিয়ে নেব। দলে কোনও কোন্দল নেই। সামাজিক মাধ্যমে যে বা যাঁরা দলের বিরুদ্ধে লেখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করাটাই আমাদের নীতি।” পাশাপাশি, তিনি জানান, জামুড়িয়ার ১২টি ওয়ার্ডে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের নিরিখে ১০টিতে এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের নিরিখে সাতটিতে বিজেপি এগিয়ে। লক্ষ্মণের ব্যাখ্যা, দলে ‘কোন্দল’ থাকলে এই ফল হত না! তবে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের মন্তব্য, “বিজেপি নেতারা ভুলে গিয়েছেন, সব ভোটের ধরন এক নয়। প্রতিটি ভোটের চরিত্র আলাদা। সুতরাং, পুরনো ফল আর খাটবে না।”