BJP

শ্যামাপ্রসাদ-স্মরণেও বিভাজনের বার্তা বিজেপির

গত ৯ জুন এ রাজ্যের জন্য করা ‘ভার্চুয়াল সভা’য় করোনা আবহের মধ্যেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রসঙ্গ ফের খুঁচিয়ে তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৫:২৮
Share:

জগৎপ্রকাশ নড্ডা।—ছবি পিটিআই।

যা হওয়ার ছিল, তা-ই হ‌ল। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান-মঞ্চকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও এক বার উস্কে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। জগৎপ্রকাশ নড্ডা থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষ— সোমবার সকলেরই বক্তব্যের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনের রেখাটি ছিল‌ খুব স্পষ্ট।

Advertisement

গত ৯ জুন এ রাজ্যের জন্য করা ‘ভার্চুয়াল সভা’য় করোনা আবহের মধ্যেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রসঙ্গ ফের খুঁচিয়ে তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর এ দিনের ‘ভার্চুয়াল সভা’য় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা বললেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সিএএ-র জন্য লড়েছিলেন। আমরা সঙ্কল্প করছি, পশ্চিমবঙ্গে আমরা এই আইন প্রয়োগ করব।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই সভাতেই অভিযোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে!’’ এই মন্তব্যে এ রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আধিপত্য বিস্তারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি, যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ ছাড়া আর কিছু নয়। নড্ডা এবং দিলীপবাবুর বক্তব্য, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং সিএএ তৈরির মধ্য দিয়ে শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্নকেই কিছুটা সাকার করেছে মোদী সরকার। তাই এ বছর তাঁরা মাথা উঁচু করে তাঁর জন্মদিন পালন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ দিন প্রত্যাশিত ভাবেই শ্যামাপ্রসাদ-রাজনীতি করেছেন। তিনি টুইট করেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে আমি তাঁকে প্রণাম জানাই। তিনি এক জন ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক, যিনি ভারতের উন্নয়নে দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছিলেন। দেশের ঐক্যের লক্ষ্যেও তিনি সাহসী পদক্ষেপ করেছিলেন।’’

Advertisement

শ্যামাপ্রসাদ-স্মরণে বিভাজনের রাজনীতির সঙ্গেই উন্নয়নের কথাও এ দিন টেনেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দিলীপবাবু থেকে নড্ডা শ্যামাপ্রসাদের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে দাবি করেন, এখন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পায়ন, সুস্থ রাজনীতি—সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়েছে। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে বিজেপি কৃতসঙ্কল্প। নড্ডা বলেন, ‘‘শ্যামাপ্রসাদের রাজ্যে শিক্ষা এখন তলানিতে। সেখানে শিক্ষার রাজনীতিকরণ, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, হিংসার রাজনীতি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে পাঠানো, মিথ্যা মামলা, এমনকি মাদক সংক্রান্ত মামলায় ফাঁসানোও চ‌লছে।’’ কাটমানির প্রসঙ্গ তুলেও তৃণমূল সরকারকে খোঁচা দেন নড্ডা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন বাংলায় কাটমানির কথা শুনছি। আগে এ সব শুনিনি। কাটমানি যাঁরা নেন, তাঁদের সাইজ কাট করতে হবে! শ্যামাপ্রসাদের আদর্শে চলে আমরা বাংলার হৃত গৌরব ফেরাব। সে দিনই হবে শ্যামাপ্রসাদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।’’ চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে শ্যামাপ্রসাদের শিল্পায়নের দিকও তুলে ধরেন নড্ডা এবং দিলীপবাবু।

তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য নড্ডাদের সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের সভাপতি হিসাবে রাজনৈতিক কথা বলতে হয়। তাই জে পি নড্ডা ও সব বলেছেন। কিন্তু বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতির বাস্তব অবস্থার সঙ্গে তাঁর মন্তব্যের কোনও মিল নেই। শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং বিস্তারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন। আর বাংলার সংস্কৃতিকে জানতে হলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগরকে জানতে হবে। বিজেপি তা জানে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement