— প্রতীকী চিত্র।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ওরফে ইডি-র অন্দরে ‘রহস্যজনক’ কিছু ঘটছে! চলছে ‘গোপন কারসাজি’! বিরোধীদের অভিযোগ নয়। আর্থিক অপরাধের মামলায় দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে নিয়ে আজ খোদ মোদী সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু এই দাবি করেন। তা-ও সুপ্রিমকোর্টের এজলাসে।
ছত্তীসগঢ়ের আবগারি দুর্নীতির তদন্তে ইডি সরকারি আমলা অরুণপতি ত্রিপাঠীকে গ্রেফতার করেছিল। ত্রিপাঠীর জামিনের মামলার শুনানিতে আজ নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে সুপ্রিম কোর্ট। ইডি-র হয়ে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু জানিয়েছেন, জামিনের আবেদনের জবাবে ইডি-র যে হলফনামা জমা পড়েছে, তাতে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। রাজু বলেন, ‘‘প্রচণ্ড তাড়াহুড়ো করে এই হলফনামা জমা পড়েছে। কোনও ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। আমি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। ইডি-র দিক থেকে কিছু ভুল হয়েছে। আমি ইডি-র ডিরেক্টরকে বলেছি, এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে।’’
বিচারপতি অভয় এস ওক ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর এই দাবি শুনে চমকে ওঠেন। তাঁরা জানতে চান, খাতায়-কলমে যিনি ইডি-র আইনজীবী, সেই ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’ কি হলফনামা দেখেননি? যে কোনও হলফনামার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হয়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কি তা হলে ওই আইনজীবীকে দায়ী করছেন? অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বলেন, ইডি-র মধ্যে কারও কোনও ‘গোপন কারসাজি’ চলছে বলে মনে হচ্ছে। তাঁকে না দেখিয়ে, তাঁর ছাড়পত্র ছাড়া হলফনামা জমা পড়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও এই বিষয়টি তদন্ত করছেন।
বিচারপতিরা বলেন, এ তো গুরুতর বিষয়। তাঁরা দিনের শেষে ফের শুনানি হবে জানিয়ে ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’কে হাজির হতে বলেন। কিন্তু পরে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসে জানান, কোথাও একটা যোগাযোগের অভাব হয়েছিল। ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’-এর কোনও দোষ নেই। ইডি-র তরফ থেকেই হলফনামা এসেছে। নতুন করে কোনও হলফনামা দেওয়া হবে। অভিযুক্তের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা বলেন, ইডি এ সব কৌশল করে জামিন পিছিয়ে দিতে চাইছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ৫ ফেব্রুয়ারি ফের শুনানি হবে।
গোটা ঘটনায় ইডি-র কাজকর্ম নিয়ে নতুন করে বিচারবিভাগীয় মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দু’দিন আগেই একই রকম একটি জামিনের মামলায় ইডি-র হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ‘আইনবিরুদ্ধ’ কথা বলছেন বলে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়েছিলেন। বুধবার বিচারপতি অভয় এস ওকের বেঞ্চেই সলিসিটর জেনারেল যুক্তি দিয়েছিলেন, আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে মহিলাদের জন্য জামিনের শর্তে কোনও শিথিলতা নেই। যদিও আইনে মহিলাদের ক্ষেত্রে বাড়তি ছাড় রয়েছে। সে দিন বিচারপতিরা বলেছিলেন, ইডি সোজা পথে না হলে বাঁকা পথে জামিন আটকাতে চাইছে। আইনে যা রয়েছে, তার উল্টো কথা বললে তা মেনে নেওয়া হবে না। এর পরে অভিযুক্ত জামিনও পেয়ে যান। শুক্রবারের ঘটনা ইডি-রহস্যে নতুন মাত্রা যোগ করল বলে আইনজীবীদের মত।