তিনটি বিধানসভা এলাকায় গিয়ে পৃথক ভাবে তিন বিধানসভার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন শুভেন্দু। —ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতা বরাবরই তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’। সেখানেই নিজেদের সেরা বাজি নামাল বিজেপি। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে বুথ স্বশক্তিকরণ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে বিজেপির কাছে এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ। তাই তৃণমূলের ‘দুর্গ’ দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘আস্থাভাজন’ শুভেন্দুকেই দিয়েছে দল।
দায়িত্ব পাওয়ার পর মঙ্গলবারেই দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অধীন তিন বিধানসভায় বৈঠক করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তিনটি বিধানসভা এলাকায় গিয়ে পৃথক ভাবে তিন বিধানসভার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন শুভেন্দু। রাসবিহারী, বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রে বৈঠক করে বুথ স্তরের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে চেয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের নেতা ও বুথ স্তরের কর্মীরা শুভেন্দুকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের আগে বিধানসভা নির্বাচনে সংগঠনের যে পরিস্থিতি ছিল, এখন আর তেমন নেই। কারণ হিসাবে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস’ পর্বে যে ভাবে শাসকদলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন দলের নিচুতলার কর্মীরা, তাতেই বুথ স্তরের অনেক কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ ধরে ধরে বর্তমান কর্মীদের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চান বিরোধী দলনেতা। এমন কিছু বুথের সন্ধান শুভেন্দুকে দেওয়া হয়েছে, যেখানে পূর্ণাঙ্গ বুথ কমিটি রয়েছে, কোথাও আবার সে ভাবে কিছুই নেই। আবার এমনও বুথের সন্ধান পেয়েছেন বিরোধী দলনেতা, যেখানে মাত্র একজন কর্মী বুথের সংগঠন ধরে রেখেছেন। এই স্তরের কর্মীদের উৎসাহ দিয়েছেন শুভেন্দু। নিজেদের বুথের শক্তি আগামী এক বছরের মধ্যে বাড়ানোর জন্যেও বেশ কিছু উপায় বলেছেন তিনি। দিয়েছেন কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশও। পাশাপাশিই নেতা-কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছেন, বুথ কমিটি গড়তে কোনও রকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁর তরফ থেকে সেই সহায়তা দেওয়া হবে। লোকসভা ভোটের সময় প্রত্যেক বুথে গেরুয়া ঝান্ডার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ভাবে রাখতে হবে বলেও নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন শুভেন্দু।
উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে প্রায় ২০ বছর তৃণমূলের নানা দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু সেই সময় দক্ষিণ কলকাতার কোনও দায়িত্ব পাননি তিনি। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সভায় বক্তৃতা দিতে গেলেও ওই লোকসভা এলাকায় সে ভাবে কোনও ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দেওয়া হয়নি তাঁকে। বিজেপিতে যোগদানের আড়াই বছরের মধ্যে শুভেন্দুকে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’-এর মুখে ঠেলে দক্ষিণ কলকাতার দায়িত্ব দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন দলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সতীশ ধন্দ। রাজ্য স্তরের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা এলাকায় বুথ স্তরের সংগঠন দেখে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। বৈঠকে উষ্মাপ্রকাশ করে ধন্দ জানিয়েছিলেন, উত্তর কলকাতায় সংগঠন ভাল ভাবে কাজ করতে পারলেও দক্ষিণ কলকাতায় তা হচ্ছে না। সেই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতানেত্রীদের থেকে জবাবও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বৈঠকে নেতানেত্রীদের কাছ থেকে বুক স্তরে সংগঠন কেন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তা নিয়ে কোনও ‘সদুত্তর’ পাননি ধন্দ। তার পরেই দক্ষিণ কলকাতার বুথ স্বশক্তিকরণের দায়িত্বে আনা হয়েছে শুভেন্দুকে।
এমনিতেই দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’। প্রথম থেকেই লোকসভা কেন্দ্রকে তৃণমূলের ‘পাওয়ার হাউস’ বলে মনে করা হয়। এই লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। এই লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভা আসন যেমন তৃণমূলের দখলে, তেমনই সিংহভাগ ওয়ার্ডও শাসকদলের অধীন। এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির কোনও কাউন্সিলরও নেই। তাই এই লোকসভা কেন্দ্রে শুভেন্দুর মতো নেতাকেই পাল্টা লড়াইয়ের ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শুভেন্দু ‘জননেতা’ এবং ‘সক্রিয় আন্দোলনের ফসল’ বলেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘আস্থাভাজন’। দক্ষিণ কলকাতায় ‘নিষ্ক্রিয়’ সংগঠনকে ‘সক্রিয়’ করতে এবং সংগঠনের বৃদ্ধি ঘটাতে শুভেন্দুই পারবেন বলে তাঁদের ধারণা। শুভেন্দুও সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। কাজ শুরু করেছেন তিন বিধানসভা এলাকা দিয়ে।