নিরঞ্জন জ্যোতি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিক থেকে)। — ফাইল চিত্র।
কলকাতায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি ব্যবস্থা করে দেবেন। শনিবার এ কথা জানালেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। তবে তাঁর ‘শর্ত’, তৃণমূলের প্রতিনিধিদের আসতে হবে বিজেপি দফতরে।
মঙ্গলবার দিল্লিতে কৃষি ভবনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেননি জ্যোতি। তৃণমূলের অভিযোগ, বাইরে তাঁদের সাংসদ ও মন্ত্রীদের দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করানোর পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তাঁর দফতর থেকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বেরিয়ে গেলে তৃণমূল নেতৃত্বকে কৃষি ভবনের ভিতর থেকে আটক করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
তৃণমূলের প্রতিনিধিরা কৃষিভবনে হাজির হওয়ার আগে সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জ্যোতি। তা নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলে তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করার সময় পেলেও তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি মন্ত্রী। নেপথ্যে শুভেন্দুর ইন্ধন থাকতে পারে বলেও কটাক্ষ করেন কেউ কেউ। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর কলকাতায় আসার কথা। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, দুপুর ১টায় সেক্টর ফাইভের দফতরে জ্যোতির সাংবাদিক বৈঠক হবে।
দিল্লি থেকে ফিরে এসে ১০০ দিনের প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে রাখার প্রতিবাদে ‘রাজভবন চলো’র ডাক দেন অভিষেক। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। রাজনৈতিক বিতর্কের এই আবহে জ্যোতির শনিবারের কলকাতা সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুকান্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা দেখা করতে চাইলে বিজেপি দফতরে আসুন। মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। স্মারকলিপি দিন। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।’’
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, অভিষেক ধর্নায় বসার ফলে পদ্মশিবিরের উপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার জেরেই সাংবাদিক বৈঠক করতে আসছেন জ্যোতি। বিজেপির একাংশ মনে করছে, একতরফা ভাবে এ রাজ্যে অভিষেকের বক্তব্য প্রচার করছে শাসকদল। দিল্লি কেন টাকা আটকে রেখেছে, তা এখানে এসে রাজ্যের মানুষকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বোঝানো উচিত। এর আগে এ নিয়ে দিল্লিতে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, গিরিরাজ সিংহ। কিন্তু রাজ্য বিজেপি মনে করছে, কলকাতায় এসে তা নিয়ে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথা বলা উচিত। আর সেই কাজটাই করতে পারেন জ্যোতি। পাশাপাশি, তৃণমূলের প্রচারের ‘রাজনৈতিক মোকাবিলা’র কৌশল স্থির করতে সুকান্তের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন তিনি।
এর আগে দিল্লিতে বসেই জ্যোতি জানিয়েছেন, কেন তিনি অভিষেকদের সঙ্গে দেখা করেননি। কেন সময় দিয়েও তিনি দেখা করলেন না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে জ্যোতি বলেছিলেন, “আমি যেটা জানতাম, তাতে তৃণমূলের সাংসদ ও মন্ত্রীরা আমার সঙ্গে ৬টার সময়ে দেখা করতে আসবেন। সে জন্যই সময় নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে সাধারণ জনতাকে নিয়ে ওঁরা দেখা করতে চাইছিলেন। যা অফিসের নিয়মবিরুদ্ধ।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, আসল বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্য তৃণমূলের ছিল না। ওঁদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতি করা। পাশাপাশি, আক্রমণ করেন অভিষেককে। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেককে বাঁচাতেই ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির তদন্ত করেনি বাংলার সরকার।’’ এ বার তাঁর এই বক্তব্য রাজ্যে এসে রাখতে পারেন জ্যোতি।